দেশের বই ঈদ সাময়িকী

বদরুল আলম-এর ছোটগল্প ‘অভিশপ্ত ছবি’

শুক্রবার, ২১ মে ২০২১ | ৪:১১ অপরাহ্ণ | 503 বার

বদরুল আলম-এর ছোটগল্প ‘অভিশপ্ত ছবি’

অভিশপ্ত ছবি
।। বদরুল আলম ।।


 

সবুজ বুদ্ধিমান ছেলে। আত্মবিশ্বাসী, পরোপকারী। তবে সর্বদা ভাবনায় ডুুবে থাকে সে। নানা ধরনের ভাবনা। নিজেকে নিয়ে ভাবে, পরিবারকে নিয়ে ভাবে, পুর্বপুরুষদের নিয়ে ভাবে। এমনকি নিজের ভাবনাগুলো নিয়েও বেশি বেশি ভাবতে থাকে সে। এ বয়সে এত ভাবনা আসে কোত্থেকে! যখন অন্যদের খেলাধুলা, হইহুল্লোড় করে সময় কাটে তখন নানা বিষয়ে ভাবতে থাকে সবুজ। এত ভাবলে জীবন চলে? তবে অন্যদের না চললেও সবুজের চলে, বেশ ভালোই চলে।

সবুজ ষোল বছর বয়সী মেধাবী বালক। মাসখানেক হলো এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এখন ফলাফলের অপেক্ষায়। আর এ সময়ই যত ভাবনা তার। সবুজ ভাবছে পূর্ব-পুরুষদের ব্যাপারে। অর্থাৎ পূর্ব-পুরুষরা কেমন ছিল, তারা কী করতো? তাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল, তারা সাধারণ ছিল, নাকি অর্থবিত্ত-বৈভবে পূর্ণ ছিল? এসব নানাবিধ বিষয় ভাবতে ভাবতে সবুজের ঘুম হারাম প্রায়। পাশাপাশি অস্থিরতাও বাড়ে। তাইতো একদিন কাউকে না জানিয়ে অতীতের খোঁজে নিজ গাঁয়ের পথে যাত্রা করে সবুজ। উদ্দেশ্য পূর্ব পুরুষদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য যোগার করে নিজে জানা, অন্যদের জানানো।

সবুজদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগন্জ জেলার লৌহজং উপজেলার সাজানো গোছানো একটি গ্রামে। এ গ্রামে তার আদি পুরুষগণ সম্মানের সঙ্গে বাস করতো এবং এখনও যারা আছে সম্মান নিয়েই আছে। মজার ব্যাপার হলো, সবুজদের গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যায়। যা থেকে সহজেই অনুমেয় এলাকাটি মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এদিকে সবুজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে বৃদ্ধ দাদু ভীষণ অবাক হন। তিনি চোখ দুটো ছোট করে বলেন-
‘কী রে ভাই, কাউরে না বইলা চইলা আইলি?’
‘হুম চলে এলাম দাদু।’
‘ভালা করসছ এহন রেস্ট নে।’
‘রেস্ট পরেও নেয়া যাবে। এখন কাজ করতে হবে। আমাকে কিছু জানতে হবে।’
‘কী জানবার চাস তুই?’
‘আমাদের পূর্ব-পুরুষদের ব্যাপারে জানতে চাই।’
‘আইজ না আরেক দিন বলুম। এহন রেস্ট নে।’
‘আমাকে এখনই বলুন দাদু। আমি সব জানতে চাই, আমায় জানতে হবে।’
সবুজ নাছোড়বান্দা সে অতীত জানতে পণ ধরে বসে আছে। তাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না। ফলে উপায়ান্তর না দেখে দাদু তার পূর্ব-পুরুষদের ব্যাপারে নাতিকে বলায় মনস্থির করেন। অপরদিকে গভীর মনোযোগসহ অপেক্ষায় আছে শহর থেকে আসা নাতি। সে অনেকটা পুলকিত। এমনি অবস্থায় দাদু দৃষ্টি সচল করে বলেন-
‘দাদু শোন…’
‘হুম।’
‘আমার দাদার বাপে এই এলাকার নামীদামী লোক ছিল। জমিদারি ছিল তার। বিশাল জমিদারি।’
‘বলেন কি দাদু! তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষ জমিদার ছিল?’
‘হুম, তবে মানুষটা যেমুন ভালো কাজ করছে আবার মন্দ কাজও করতে হয় তার।’
‘ও।’
‘একবার কিছু প্রজা জমিদারি টেক্স দিতে অস্বীকার করে।’
‘তারপর?’
‘জমিদার সাব ভীষণ ক্ষুব্ধ হন।’
‘ও।’
‘জমিদার সাব রাগ করে প্রজাদের শাস্তি দেন। ওই ঘটনায় আট দশজন প্রজা মৃত্যুবরণ করে। এতে প্রজারা ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়।’
‘তারপর কী হয় দাদু?’
‘নিহত প্রজাদের পরিবার-পরিজন অভিশাপ দেয় জমিদার সাবরে।’
‘তারপর?’
‘প্রজাগো অভিশাপে অল্পদিনের মধ্যেই জমিদার চৌধুরী শামসুজ্জামানের মৃত্যু হয়।’
‘বলেন কী দাদু! ইন্টারেস্টিং তো…’
‘অবশ্য এরমধ্যে জমিদারিও যায়।’
‘আচ্ছা দাদু আমাদের পূর্ব-পুরুষদের জমিদারির কিছু নিদর্শন দেখানো যাবে? যেমন জমিদারদের পোশাক-আশাক, দলিল-দস্তাবেজ বা ব্যবহার্য যে কোনো কিছু।’ ‘অগুলি নাই নাতি আমার।’
‘কিছুই নেই! তাহলে চলবে কীভাবে?’
‘তয় একখান জিনিস আছে, খুব ভালা জিনিস। শেষ জমিদারের আঁকানো একখান ছবি আমার কাছে আছে।’
‘ছবিটি আমার চাই।’
‘যাহ্ নিয়া যা তুই। তরে দিয়া দিলাম।’
অতপর সবুজ তার পূর্বপুরুষ অর্থাৎ সেই অভিশপ্ত জমিদারের ছবি নিয়ে ঢাকায় নিজ বাড়িতে চলে আসে। নিজ শয়ণকক্ষে স্থাপন করে এবং সারাক্ষণ ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে। দিন নেই রাত নেই একদৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে থাকে।
এদিকে ছবিটি দেয়ালে টানানোর পর সবুজদের বাড়িতে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। দিনে যেমন তেমন রাত গভীর হলে দোতলা ভবনের ছাদে কে যেন হাঁটাহাঁটি করে। মাঝেমধ্যে মানুষের হাঁকডাক এমনকি ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দও শোনা যায়।
এরপর সময় যত যায় শব্দের তীব্রতা বাড়ে।

এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। অদ্ভুত এক সকাল প্রত্যক্ষ করে রাজুদের পরিবারের লোকজন। দেখে ভবনের ছাদে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে। দেহটি আর কারো নয়, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড আব্দুর রহিমের। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মৃতদেহটির পাশেই পড়েছিল অভিশপ্ত জমিদারের সেই ছবি। সবুজ ও তার পরিবারের লোকজন এবং আশেপাশের লোকজন অবাক হয়ে ভাবে, এ কী করে সম্ভব! এ অসম্ভব, অবাস্তব! না, না এ হতে পারে না…

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD