মার্ক টোয়েন বলেছেন, “ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি শান্ত বিবেক : এটি আদর্শ জীবন।” আর বইয়ের থেকে ভালো বন্ধু কে হতে পারে! তাই আদর্শ জীবনের জন্য বইয়ের পরিপূরক আর কিছু নেই।
আমাদের সুন্দর জীবনযাপন, সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতার মূলে আসলে বই। বইকে সবার সামনে তুলে ধরতে, প্রচার করতে, বইমুখী সমাজ সৃষ্টি করতে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য জাতীয় পর্যায়ের বৃহৎ পরিসরের বইমেলা অমর একুশে বইমেলা’র পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বইমেলার আয়োজন হয়ে থাকে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বইমেলা হলো বিভাগীয় বইমেলা।
সম্প্রতি (গত ৪ মে) সিলেটে শেষ হয়ে গেল সপ্তাহব্যাপী বিভাগীয় বইমেলা-২০২৪। এর মাধ্যমে সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। সিলেটের রিকাবি বাজারে জেলা স্টেডিয়ামের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল।
জাতীয় পর্যায়ের প্রায় ৫০টির বেশি সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার সাথে তাল মিলিয়ে বইমেলাকে সাজানো হয়েছে যাতে তারা বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী এ মেলা শুরু হয়।
মেলায় আশানুরূপ বিক্রি ও সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশিরভাগ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে। তারা হতাশা প্রকাশ করে জানান, তারা পুরো মেলার সময়টা বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই কাটিয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে একদম পাঠক ছিল না বললেই চলে। তার মানে বেশিরভাগ প্রকাশনী মেলার খরচ উঠাতেই হিমশিম খেয়ে গেছে, যা আমাদের দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ। আসলে এমন বইমেলা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না। বর্তমান প্রজন্মের ধীরে ধীরে বইবিমুখ হয়ে যাওয়ায় দেশের সার্বিক শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি হুমকির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের প্রকাশনা শিল্প ভবিষ্যতে মুখ থুবড়ে পড়বে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই জন্য চাই সকলের সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিদের আন্তঃসমন্বয় ও সহযোগিতা।
আমাদের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য, নিজেদের উন্নত করতে, সৃজনশীল করতে এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে হবে এবং সবার এগিয়ে আসতে হবে। এইজন্য ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত উক্তিটি বলা যেতে পারে, “বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষাকবচ।”
সুতরাং সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে উন্নত করতে আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে, বইয়ের মধ্যে থাকতে হবে, বইয়ের চর্চা করতে হবে এবং নিজেদেরই পাঠক হতে হবে।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD