‘কবিতা প্রতিদিন’ দেশের বই-এর নতুন আয়োজন। এই আয়োজনে প্রতিদিন তরুণ কবিদের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হয়। আজ প্রকাশিত হলো সাদিক আল আমিন’র কবিতা
১.
কালো পালকের মতো বিলকিস চোখ তোমার এই কুয়াশায়
খুব ধীরে কাঁপে যেন শীত-লাগা বকরি, তোমার গোয়ালের লাল গাই
মোয়াজ্জিন তর্জমা জপে আযানের পর তবু আল্লার দরজায়
তুমি নীরবে তৈরি হও ইবাদতে, তোমার চোখে বেহেশতের ঠাঁই
আরো যারা থাকে মেহনতি মজদুর, বয়স্ক লোক অথবা বাল-বাচ্চা
প্রস্তুত হয় মেখে সুগন্ধি চির মখমল আতর, অবয়ব চিহ্নিত মুসলমান
এক প্রভুর ইবাদতে যতো আছে ব্যক্তি-জন, সবার দিল হয় সাচ্চা
দূর থেকে চির সুমধুর ক্রমাগত ভেসে আসে জোহরের আযান
তোমার উঠোনের লাল মুরগী খুঁটে খুঁটে খায় মাছ-কুটা উচ্ছিষ্ট
সবুজ দিঘীতে গোসল সারে রমজান আলী, সাথে তার পোলা
যখন কুয়াশার আড়ালে সূর্যও বড় অভাগার মতো ক্লিষ্ট
তুমি মন হারাও মন হারানোর মতো নারী তুমি আলাভোলা
খুব ধীরে কাঁপে যেন শীত-লাগা বকরি, তোমার গোয়ালের লাল গাই
তুমি নীরবে তৈরি হও ইবাদতে, তোমার চোখে বেহেশতের ঠাঁই
২.
আমরা দেখেছি স্বপ্ন সুমধুর একাকী কিংবা একত্রে
তুমি-আমি ভিন্ন দুই দরিয়ার বাসিন্দা হয়েছি এক
যখন তুমি শান্ত নীরব মেয়ে জেগে থাকো গভীর রাত্রে
নিজেকেই বলেছি নিজের বুকের ক্ষতটুকু মেপে দেখ
তখন কি জানি বিলকিস হয় বিলকুল অনুভূতি যেন
পাহাড় ভেঙে পড়ছে বুকে আর চোখ-ভর্তি নীল সমুদ্র
তোমাকে দেখলেই তোমার প্রতি এতো আড়ষ্টতা কেনো
শান্ত শীতল বর্ষায় আমার হঠাৎ মেঘ সরে উঠে রৌদ্র
জুলেখা চাচি একদিন ঠিকি ধরে ফেলেছিল সব ঘটনা
আর বলেছিল আমাকে কাউনের বাছতে বাছতে চাল
‘যা শুনছি তার সব-ই কি সত্য না কি রটনা?
আমি বলি, ‘যাও চাচি। কী সব বলো ভুল-ভাল!’
আমি মনে মনে হেসে আবার ইবাদতে যাই
মোনাজাতে আজ চাইব তোমাকে, তোমার চোখে বেহেশতের ঠাঁই
৩.
তারপরে যখন রোজ দুপুরে সুরুজ দেখা যায় না
শীতল দীঘিতে দেয় ডুব সব চপল, চঞ্চল ছেলেপেলে
সাঁতার কাটে, গোসল সারে তখন তারা খুব হেসেখেলে
তোমার চোখে আমি নিশ্চুপ দেখি স্বচ্ছ, টলটেল আয়না।
দাদাজান ভীষণ বরফ-শীতেও গোসল সারে আর
চামড়া-ঝোলানো শরীরে মাখে সরষের তেল
তখন হঠাৎ মৃদু রোদ উঠে শরীরে পড়লে তার
চকচকে আয়ু ঠিকরে পড়ে, যেন পথ ভুলে যাওয়া রেল।
তখন জানি না বিলকিস কেনো আমি ভুলে যাই জগতের সবকিছু
ইহজন্মের লোভ সামলাবো নাকি পরকাল-চিন্তায় যাব
ভেবে না পেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ যেন ছুটেছি শুধুই তোমারি পিছু
পথ হারিয়ে জানি না আবার কোন সে অসীম পথের সন্ধান পাব!
খুৎবা হয় শুরু, সুগন্ধি মেখে পাঞ্জাবির ওপর হাফ-হাতা সুয়েটার
তুমি বিলকিস আলোময়ী, তোমার চোখে বেহেশতের আঁধার।
৪.
তুমি মন হারাও মন হারানোর মতো নারী তুমি আলাভোলা
নারী তুমি অনিন্দ্য উল্লাসী, হুরের চেয়েও অধিক এক
আগমনে তোমার বহুদিনের ভেজানো কপাট হয়েছে খোলা
নাচো তুমি পা ফেলে বুকে আমার, বাঁধো কেনো মোহ আরেক?
আমি তবু উদ্বাস্তু মেঘ, কেনো যাযাবর উড়ে যাই, থাকতেও ঘর
তালগাছে বোনা বাসা, খুবই কি জটিল সন্ধি জীবনের?
নিজের সত্তাই যখন না বলে নিজেকে করে দিয়েছে পর
হেথা-সেথা বেবাক অথচ বেকার খুঁজে বেড়াই সন্ধান, প্রাণের
দিঘীর ঠাণ্ডা জলে ঠাণ্ডা দেহ মিলিয়েছে জলঢোরা
সাথে তার নেই কেউ তবু সেটাই যেন ঠিক
তুমি যেমন শুভ্র বকুল, তেমনি হলুদাভ উজ্জ্বল গোরা
হারিয়েছি পথ না জেনে অথচ ঠাহর করি কোনটি সঠিক
চারিদিকে শুধু তুমি আর তুমি, তুমি ছাড়া কিছু নাই
তসবি জপে জপে প্রার্থনা বিলকিস, পরকালেও যেন তোমাকে পাই
৫.
জানি না আবছায়া ছানির পরে দেখেছি কেনো কোমল রোদ
তারি হাত ধরে ফিরেছি ঘরে। ঘর নাকি অচিনপুর?
প্রেমের খাতিরে কেবল কি প্রেমিকাই নেবে সকল শোধ?
তুমি চলে গেছো ঘর ছেড়ে ঘরহীন পাখি তুমি অনেক দূর
থেমে যেতে চাইলেই থেমে যাওয়া যায় না
একথা তুমি বুঝবে কীভাবে! তুমি তো রঙিন ময়ূরী
পারতে কখনো আমাকেও থামিয়ে দিতে; যেতাম না
বিলকিস, হৃদয়ে তোমার দেখ বাজছে অচিন বাঁশরী
তখন দেখি ভাসুর তোমার গোসল সেরে মাথায় দেয় টুপি
পুরনো মিহি লুঙ্গির ওপর কালোরঙা চাদর, পায়ে কাঠের খড়ম
তোমার স্বামীও যায় নামাজে। তুমি লোক না দেখিয়ে চুপিচুপি
শান্ত নারী তৈরি হও ইবাদতে, তোমায় দেখে বেনামাজি পায় শরম
খুৎবা হয় শুরু, ইমামের বয়ান পুরনো সেই কাঁচা-মসজিদ ঘরে
আল্লার সমস্ত রহমত নাজিল হউক তার হীন বান্দার তরে
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD