‘কবিতা প্রতিদিন’ দেশের বই-এর নতুন আয়োজন। এই আয়োজনে প্রতিদিন তরুণ কবিদের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হয়। আজ প্রকাশিত হলো দীপিকা দীপা’র কবিতা
পুরস্কার
সম্মানিত পুরস্কার পেতে
দাঁত পড়া, চুল পাকা হতে হয়!
হয়তো মরণোত্তর!
হাঁটতে শক্তিহীন,
বাক্শক্তি অগোছালো হলে
সে আসনে বুঝি আসীন হওয়া যায়?
এক অনুষ্ঠানে দেখেছি, চলৎশক্তিহীনকে ধরে-ধরে
মঞ্চে উঠানোর দুর্বিষহ দৃশ্য।
পুরস্কৃত অনেকের বক্তব্য-ভাষণের কথা জড়িয়ে,
অস্পষ্ট ধনী-তরঙ্গে কি যেন ভেসে আসছিল।
অবশ্য কষ্ট হলেও আসন গ্রহণ,
পুরস্কার তুলে দেবার কালে,
হাতলাঠি, সাহায্যকারী থাকলেও
হাততালির কোনো কমতি ছিল না বলা-বাহুল্য।
মঞ্চে না ডেকে, বাড়িতে পুরষ্কার পৌঁছে দিলে,
এরচে শান্তি পেতো তারা।
বৃদ্ধদের পুরস্কার দিয়ে
জাতি অকৃতজ্ঞতার দায় বাঁচায়।
অথর্ব হলে পুরস্কারে লাভ কি?
তরুণদের ও আসনে বসা মানা কি?
কম বয়সে পুরষ্কারের স্বীকৃতি পেলে
আরও উদ্দীপনায় কাজ যেতো এগিয়ে।
বিশ্বকে অনেক দিতে পারতো আনন্দ-সৌরভে ভরিয়ে।
পুরস্কারের স্বীকৃতি এ-তো নয়,
মৃত্যু পথযাত্রীদের কাছে এসব-
অনেকটা বোঝাস্বরূপ মনে হয়।
কঠিন বাস্তবতা
পৃথিবীতে কত কঠিন বাস্তবতা!
বীভৎস ভাবনার চেয়েও কুৎসিত।
আমরা তবু মানুষ বলে
সর্বশ্রেষ্ঠ জীব জ্ঞানে, বুক ফুলিয়ে করি জিদ।
রক্তের হিমোগ্লোবিনের রং
ফিকে হয়ে গেছে স্বার্থের তাপে-চাপে।
সম্পর্কগুলো শুধু স্বার্থের ঘ্রাণ খোঁজে।
তৈল মর্দনের এত তেল মোলায়েম, তুলতুলে
এত মেকি কথার আবিষ্কারক আজ মানুষ নিজে।
মিথ্যাগুলো নির্লজ্জের মতো একটুও ঠোঁট, বুক, স্বর না কাঁপিয়ে
বলে চলে অনর্গল, দুর্বার গতিতে।
তৈল মর্দনের ভাষা বৈচিত্র্য,
মধুরতা, ফাঁপা গভীরতা,
যা-কিনা কথার কথা
তবুও অপ্রাপ্তি- হাসিলে পাকা ব্যবস্থা।
একটা অভিধান হবে কুড়িয়ে সংগ্রহে,
মানুষরা যাচ্ছে কোথায়, উঁচুতে না নিচুতে?
মানবতা বাড়ছে, ধুকছে, না কঙ্কাল হয়ে আছে?
মানুষ আজ ভালো কাজের ভাণ করেও ভিডিও ভাইরাল করে।
সেসব ভিডিও বিকিয়ে অগণিত সহানুভূতির অর্থে ব্যাংক একাউন্ট ভারি করে।
ভেজাল, প্রিজার্ভ করা খাদ্য মানুষকে আরও ভেজাল বানাচ্ছে।
তাদের রক্তধারার স্বার্থ, লোভ, হিংসা কুড়ে -কুড়ে খাচ্ছে।
সব মেকি আর মেকি।
এদের ভিড়ে আসল একটু আধটু য়া, তাদের চলছে ভীষণ দুর্গতি।
‘অতি’ বিষয়ক
অতি উৎসাহে অতি ভাটা পড়ে,
অতি ভালোবাসায় অতি দুঃখ আনে।
অতি বাড়ন্ত গাছ সহজেই ভাঙ্গে।
অতি ছোট হলে নাকালের শেষ না থাকে।
প্রবাদ আছে—
অতি দর্পে লঙ্কা ঘটে।
অতি সুন্দরীর বর না জোটে,
অতি যোগ্যতীর ঘর না মেলে।
অতি আদর— বাদর গড়ে,
অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট করে,
অতি কচলালে লেবু তিতো লাগে।
অতি চালাকের গলায় দড়ি পড়ে।
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট হয়,
অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ জানায়।
‘অতি’ নিয়ে প্রবাদ-প্রবচনগুলোর মূলকথা,
‘অতিরিক্ত কিছুই ভাল না’,
একবাক্যে যাবে পাওয়া।
ব্যতিক্রম হয়েছে,
‘অতি ফলন্ত গাছ নুয়ে পড়ে’ কথাতে।
মধ্যশ্রেণির সবকিছুই চলনসই হয়,
তিলেতিলে গড়ার ফলাফলে,
চমৎকারিত্ব বেশি দেখা যায়।
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD