বাংলাদেশকে লেখক ‘বৃষ্টির ঠিকানা’ বলেছেন

বুধবার, ২১ নভেম্বর ২০১৮ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ | 1805 বার

বাংলাদেশকে লেখক ‘বৃষ্টির ঠিকানা’ বলেছেন

বুয়েটে পড়ার সময় আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে বার্ট্রান্ড রাসেলের লেখা ইন প্যারিস অব আইডলনেস অ্যান্ড আদার এসেজ। এটি লেখকের সমাজবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থনীতি নিয়ে লেখা কয়েকটি প্রবন্ধের সংকলন। মূল প্রবন্ধে লেখক অলসতা সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লেখকের মতে আমাদের কাছে যে প্রযুক্তি আছে, তা দিয়ে সবার অন্নবস্ত্রের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য দিনে চার ঘণ্টার বেশি কাজ করা উচিত নয়। বাকি সময়টুকুতে মানুষ করবে তাঁর পছন্দের কাজগুলো। যেমন ছবি আঁকা, গবেষণা করা ইত্যাদি। পেটের কথা না ভেবে মানুষ এই কাজগুলো করবে মনের আনন্দের জন্য। কী সুন্দর কথা! তাই না? লেখাটি ১৯৩০–এর দশকের হলেও বর্তমান কর্মব্যস্ত যুগের জন্য আরও বেশি প্রযোজ্য।

বুয়েটের ক্লাস শুরুর আগে আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা দেশে বিদেশে বইটি পড়ি। লেখক কাবুল কৃষি কলেজের শিক্ষক থাকাকালীন অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর সহজাত রম্য রসাত্মক বর্ণনায় তৎকালীন আফগান সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। লেখকের আফগান ভৃত্য আবদুর রহমান থেকে শুরু করে বাদশা আমানুল্লাহ পর্যন্ত আফগান সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা রয়েছে এতে।

ক্লাস টেনে পড়ার সময় পড়েছি মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বৃষ্টির ঠিকানা। প্রধান চরিত্র টুম্পার সঙ্গে তার ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যাওয়া বাবার সম্পর্ক গল্পের মূল বিষয়। প্রবাসী বাঙালির জীবন, বিশেষ করে বাংলাদেশি কিশোরেরা প্রবাসে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, সেগুলো উঠে এসেছে বইতে। বইটি পড়ার সময় আমার বয়স টুম্পার কাছাকাছি ছিল। সে জন্যই বোধ হয় খুব সহজে গল্পটা আমাকে ছুঁয়ে যায়। সবচেয়ে যে বিষয়টা ভালো লেগেছে, বৃষ্টির ঠিকানা বলতে লেখক আসলে বাংলাদেশকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মতো সুন্দর বৃষ্টি পৃথিবীর কোথাও হয় না। আমার শৈশবের কিছু সময় সুনামগঞ্জে কেটেছে। তাই এই সুন্দর বৃষ্টি আমি দেখেছি।

আমার প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর সব সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছোটগল্পগুলোই সবচেয়ে প্রিয়। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি গল্পগুচ্ছ বইটি পড়ি। এটি কবিগুরুর মোট ৯১টি ছোটগল্পের সংকলন। আমার প্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ছুটি, কাবুলিওয়ালা, ঠাকুরদা, ইচ্ছাপূরণ এবং অধ্যাপক। রবিঠাকুরের প্রায় প্রতিটি গল্পের চরিত্রগুলোতে নিজেকে কল্পনা করা যায় এবং কাহিনিগুলো নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে মেলানো যায়। এটা খুব অদ্ভুত লাগে।

ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থেকে রাহুল সাংকৃত্যায়নের লেখা ভোলগা থেকে গঙ্গা পড়েছি ক্লাস সেভেনে। ইউরোপের ভোলগা নদীর তীরে বসবাস করত আর্যরা। মধ্য এশিয়া, হিন্দুকুশ এবং হিমালয় পাড়ি দিয়ে কীভাবে তারা ভারতের গঙ্গাতীরে এল, সেই কাহিনি লেখক বর্ণনা করেছেন বিশটি ছোটগল্পের মধ্য দিয়ে। কাহিনি ও চরিত্রগুলো লেখকের কল্পনাপ্রসূত হলেও গল্পে ফুটে ওঠা মানুষের জীবনযাপনের রীতিনীতি, বিভিন্ন কালের এবং স্থানের বর্ণনা ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে রচিত। পড়ার মজার পাশাপাশি তাই জানার আনন্দটাও পাওয়া যায়।

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD