॥ তাসলিমা কাজী ॥
প্রতিটি দেশের জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতে আসে কিছু মহাপুরুষ, যারা সেই জাতিকে আলোর দিকে নিয়ে যায়, নতুন করে চিনতে শেখায় স্বদেশপ্রীতি। আমাদের বঙ্গেও এমন কিছু মহাপুরুষের মধ্যে হায়াৎ মামুদের নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে। যিনি আমাদের সাহিত্যে এবং দেশের শিক্ষায় দিয়েছেন আলোর বাণী। আমরা গর্ব করতে পারি, কারণ আমাদের একজন হায়াৎ মামুদ আছেন। আজকে শিক্ষক, অনুবাদক, ভাষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও লেখক হায়াৎ মামুদ-এর ৮০তম জন্মদিবস। ১৯৩৯ সালের ২ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ড. হায়াৎ মামুদ স্যার একাধারে কথাসাহিত্যিক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, অনুবাদক। গবেষক ও প্রবন্ধকার হিসেবেও তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। ড. হায়াৎ মামুদ কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন বাংলা একাডেমিতে কাজ করেন। এরপর দীর্ঘকাল তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ‘তুলনামূলক সাহিত্যের’ ওপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য কিছু করতে। তাইতো বিভিন্ন লেখকদের জীবনীগ্রন্থ লেখার মাধ্যমে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন সাহিত্যজগতের সাথে। লালন সাঁই, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আবুজাফর শামসুদ্দীন, সিকান্দার আবু জাফর, সোমেন চন্দ প্রমূখ লেখকের জীবনী বা সম্পাদিত গ্রন্থ তারই পরিচয় বহন করে। এছাড়াও তিনি চেয়েছেন আমরা যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাহিত্যকেও জানি। তাই ম্যাক্সিম গোর্কি, তলস্তয়, গেরাসিম স্তেপানভিচ্ লিয়েবেদেফসহ অনেক লেখকের বইয়ের অনুবাদ তিনি করেছেন।
আনন্দের বিষয়, রুশ থেকে বাংলা অনুবাদের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে ঢাকাস্থ রুশ দুতাবাস থেকে পেয়েছেন পুশকিন পুরস্কার।
ম্যাক্সিম গোর্কির ‘চড়ুইছানা’, অনুবাদ করেছেন যা সব মহলে উচ্চ প্রশংসা লাভ করে। সাহিত্যজীবনে তাঁর রচিত বই ৬০ এর অধিক। তবুও যেন সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই তার। তিনি চান আমাদের জন্য আরো কিছু করতে। মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জটিলতা’ তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থের নাম। শিশুদের জন্য লিখেছেন প্রচুর শিশুসাহিত্য।
তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের সংখ্যা অসংখ্য। তার মধ্যে জীবনব্যাপী শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তিনি পান বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), একুশে পদক (২০১৬), রবীন্দ্র পুরস্কার (২০১৭)। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সাধারণ এবং সহজ সরল জীবনে অভ্যস্ত এই মনীষা। বাড়ির কাজের লোক থেকে শুরু করে সবাই তার কাছে সমান সমাদর পেয়ে থাকেন। তিনি খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যান। বইয়ের প্রতি ভালোবাসায় তিনি বাড়িতে গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি। তাঁর কাছেই শেখা যায় মানুষ কীভাবে মনুষ্যত্ব নিয়ে চলবে।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD