বর্তমান সময়ে ফেসবুককে অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ধরনের যোগাযোগের বৃহৎ মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। এসবের পাশাপাশি ফেসবুক হয়ে উঠেছে লেখক-পাঠক-প্রকাশকেরও ভাবনা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম।
ফেসবুকে অনেকগুলো বইয়ের গ্রুপ চোখে পড়ে। বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়, বইয়ের সুন্দর সুন্দর ছবি শেয়ার করে পাঠক। অনেক সময় লেখককে পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েও দেওয়া হয়। রিডিং সোসাইটি গঠনে কম-বেশি ভূমিকা রাখছে গ্রুপগুলো। কিন্তু সম্প্রতি বইয়ের গ্রুপগুলোতে গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে যেন শো-অফের হিরিক পড়েছে। বইয়ের পাশে চুরি, চায়ের কাপ কিংবা অপরাজিতা ফুল সাজিয়ে ছবি পোস্ট করলে মেম্বারদের লাইক-কমেন্টসের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু একজন ঋদ্ধ পাঠক যখন মানসম্পন্ন বই পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখে পোস্ট করে তখন গ্রুপের বাকি সদস্যদের উপস্থিতি খরা শুরু হয়। কষ্ট করে লেখা বই আলোচনাগুলো যারা লিখছেন সেসব পাঠক সমাদরের অভাবে গুটিয়ে যাচ্ছে আর এভাবেই কমে আসছে বই আলোচনা।
সামগ্রিকভাবে কমে আসছে বইয়ের প্রচার প্রচারণা, কমে আসছে পাঠকের উপস্থিতি, তলানীতে ঠেকছে বই পড়া সংস্কৃতি। এই যখন পরিস্থিতি তখন ভাষাচিত্র বুকক্লাব নামের একটি বইয়ের গ্রুপ ভিন্নরকম এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। বইপড়া প্রতিযোগিতা! নিয়ম ছিল বই পড়ার মুহূর্ত ভিডিয়োতে ধারণ করে আপলোড করতে হবে বুকক্লাবে তারপর সেই পোস্টে ৫-১০ জন বইপ্রেমী বন্ধুকে ট্যাগ করতে হবে। দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগিরা অংশ নেয় অসংখ্য প্রতিযোগি। জুলাই মাসে শুরু হয়ে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত চলে প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব। দেড় মাসের বেশি সময়ে দুই গ্রুপে মোট ১৯৭ জন প্রতিযোগি অংশ নেয়। উল্লেখ্য, ক-গ্রুপে ৬৯ জন ও খ-গ্রুপে ১২৮ জন প্রতিযোগির অংশগ্রহণে শেষ হওয়া প্রথম পর্বের সকল প্রতিযোগীর জন্য রয়েছে একটি বই ও সম্মাননা সনদ।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ক-গ্রুপের ফলাফল ঘোষণা করা হলেও খ-গ্রুপের প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে সেরা ৫০ বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন নির্বাচক প্যানেল। অবশেষে অনেক যাচাই-বাছাই শেষে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ খ-গ্রুপের জন্য নির্বাচিত প্রতিযোগীর লিস্ট প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র বুকক্লাব। তিন পর্বের প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীরা পাবেন ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের বই। পুরষ্কারকে পাশ কাটিয়ে প্রতিযোগীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বেশ কিছু প্রতিযোগী জানিয়েছে, ‘শেষ পর্ব পর্যন্ত যদি টিকতেও না পারি তবু আফসোস থাকবে না। প্রথম পর্ব থেকে দ্বিতীয় পর্বে আসতে পেরেছি এটাই অনেক আনন্দের। বই পড়ার অভ্যাস তো হারাতেই বসেছিলাম, এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেটা ফিরে পেয়েছি এই তো অনেক। মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকা বাচ্চারা অবসরে পড়ছে, ভিডিয়ো ধারণ করছে এই দৃশ্য অপার্থিব আনন্দের।’
আয়োজকদের নীরব আন্দোলনে একাত্ম ঘোষণা করেছে পাঠক, ফিরে এসেছে বই পড়ার সংস্কৃতি- আপাতদৃষ্টিতে এটাই ভাষাচিত্র বই পড়া প্রতিযোগিতার বড় সাফল্য। কিন্তু এ প্রতিযোগিতার পেছনে লুকিয়ে আছে আয়োজকদের নিগূঢ় স্বপ্ন। স্বপ্নের সারমর্ম জানতে চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
—
প্রতিযোগিতার বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন ভাষাচিত্র বুক ক্লাব ফেসবুক গ্রুপ-এ। গ্রুপ লিংক :
https://www.facebook.com/groups/bhashachitrabookclub
প্রতিযোগিতার উল্লেখযোগ্য ভিডিয়ো প্রচারিত হচ্ছে ভাষাচিত্র ইউটিউব চ্যানেল থেকে। চ্যানেল লিংক : https://www.youtube.com/publisherbhashachitra
—
প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ভাষাচিত্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের পথটি পাঠকমুখী না হয়ে সাপ্লাইমুখী হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠকবান্ধব কোনো উদ্যোগ-আয়োজনে আগ্রহী না হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বই বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় আমাদের মনে হয়েছে, রিডিং সোসাইটি গঠন ক্রমশ হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়ছে। অথচ আমরা মনে করি, রিডিং সোসাইটি গঠনে প্রকাশকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই তাগিদ থেকেই বইকে বিভিন্ন পাঠকের কাছাকাছি পৌঁছে নেয়ার জন্য আমাদের এই বইপড়া প্রতিযোগিতা। আমরা এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। কারণ বিভিন্ন বয়সী পাঠক অংশ নিয়েছেন আমাদের এই আয়োজনে। আশা করি, এই ধরনের আয়োজন আরও নিয়মিত হলে বিভিন্ন পাঠকের কাছে বই আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD