বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণপুরুষ কবি নজরুল। প্রেমের কবি, সাম্যের কবি ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুলের লেখনি ধুমকেতুর মতো আঘাত হেনে আমাদের জাগিয়ে তুলেছিল।
বর্ণাঢ্য জীবনে কত কিছুই না করেছেন নজরুল। কলকাতা ছিল মূলত তাঁর কর্মস্থল। তবে কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, সিলেটে এসেছেন।
১৯৭২ সালের ২৪ মে অসুস্থ কবি এলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। কবির সঙ্গে ছিল কবির পুরো পরিবার। বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী ও তাঁর স্ত্রী উমা কাজী। ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী কল্যাণী কাজী এবং তাঁদের সন্তানেরা। কবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডি কে রায়ও এসেছিলেন সঙ্গে।
এর আগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের কলকাতায় গিয়ে দেখে এসেছিলেন কবিকে। তাঁকে বাংলাদেশে আনার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। ধানমন্ডি ২৮ নম্বর সড়কে একটি ভবন নির্ধারণ করা হলো ‘কবি ভবন’ নামে। কবিকে রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলি আমরা। একই সঙ্গে প্রেমের কবিতার জন্যও তাঁর দ্বারস্থ হতে হয়। গানের জগতে নজরুলের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন খড়্গহস্ত।
নাটক ও চলচ্চিত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে নজরুলের গান। নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শচীন সেনগুপ্তের “সিরাজদ্দৌলা” নাটকটির কথা। ‘নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা’ কিংবা ‘পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা’ গান দুটো কার না ভালো লাগে। “রক্তকমল” নাটকেও ছিল নজরুলের গান। ছিল “মধুমালা” নাটকে।
১৯৩১ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পাহাড়ী সান্যাল ও কানন দেবী অভিনীত দুটো ছবি “বিদ্যাপতি” ও “সাপুড়ে”র সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। পরিচালক হিসেবেও নজরুল কাজ করেন “ধ্রুব” চলচ্চিত্রে। সে ছবিতে নারদের ভূমিকায় অভিনয়ও করেন।
১৯২১ সালের জুন মাসে নার্গিস খাতুনের সাথে বিবাহ ঠিক হয় কিন্তু কাবিন নামায় ঘরজামাইয়ের কথা থাকায় নজরুল রাগ ও অপমানে বিয়ের আসর থেকে রাতেই কুমিল্লায় চলে যান। এই শহরে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের পরিবারের সাথে নজরুলের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই পরিবারে বিরজাদেবীকে তিনি মা ডাকতেন। সেই পরিবারের মেয়ে আশালতা বা প্রমীলাকে নজরুল বিয়ে করেন।
১৯২২ সালে “ধুমকেতু” নামে একটা পত্রিকায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল লিখেছিলেন। এই অপরাধে ১৩ মাস জেলে থাকতে হয়েছিল। জেলে থাকা অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ‘বসন্ত’ নামে একটা নাটক নজরুলের নামে নিবেদন করেন।
১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাই কবিকে পিজি হাসপাতালে (এখন যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি করা হয়। তিনি ছিলেন ১১৭ নম্বর কেবিনে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মারা যান।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের আজকের দিনে (২৫ মে) বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD