সাধনা সাহা
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান…
কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি যেন নতুনরূপে, নতুনভাবে, নতুন সুরে ঝংকৃত হয়েছে মাইনুল এইচ সিরাজীর ‘আধখাওয়া দিন’ গ্রন্থে। পড়তে গিয়ে বইটির পাতায় পাতায় অনুভব করেছি নজরুলের ‘মৃত্যুক্ষুধার’ মর্মরিত ক্রন্দনধ্বনি, দীর্ঘ নিঃশ্বাসের চাপা গোঙানি, কখনো বা কপোল বেয়ে বয়ে গেছে লবনাক্ত স্রোতস্বিনীর উষ্ণ স্রোতধারা। কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে গেছে মন, বারে বারে হতাশার তীব্র আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ভাবনা। হয়তো একটু সুখের আস্বাদনে পরিভ্রমণ করেছি পাতার পর পাতা, বারবার করে নোনাজলের স্রোতধারার পরিসমাপ্তি ঘটাতে গিয়েও পারিনি, বরং বুকের গহীনে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠেছি। এমনই কিছু হৃদয়ছোঁয়া, পোড় খাওয়া ঘটনার বর্ণনার মধ্যেই লেখক তুলে ধরেছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা, দারিদ্র্যের কঠিন শৃঙ্খলের নাগপাশ থেকে মুক্তির পাবার আকুতি, সুখের আস্বাদন পাবার জন্য তীব্র লড়াই। মায়া মমতার অমিয়ধারায় একটা পরিবারের সদস্যদের কঠিন এবং কৌশলী আত্মত্যাগের প্রতিযোগিতা। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর সামাজিক নিষ্পেষণে জর্জরিত একটি পরিবারের করুণ কাহিনিই হলো এই ‘আধখাওয়া দিন’। যা পড়লে চোখ ভিজে উঠবে বারবার, হাহাকারে জর্জরিত হবে মন, বিষাদে নেমে আসবে অবসাদের কালো ছায়া।
আসলে এই ঘটনাগুলো যে আমাদের চারপাশের, আমাদের জীবনের। কখনো বা একান্ত নিজেরও! বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে বলি,
‘কারণ, গল্পগুলো জীবনের। অথবা হতে পারে জীবনটাই গল্পের’।
বই : আধখাওয়া দিন
লেখক : মাইনুল হক সিরাজী
প্রকাশক : জসিম উদ্দিন
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান : কথাপ্রকাশ
প্রচ্ছদ অলংকরণ : আনিসুজ্জামান সোহেল
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২১
মুদ্রিত মূল্য : ২০০ টাকা
‘আধখাওয়া দিন’ বইতে একজন দরিদ্র স্কুল শিক্ষকের যাপিত জীবনের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সাথে পরিবারটি ভয়ংকর যুদ্ধ করে এগিয়ে গেছে অথচ মাথা নত করেনি কখনো। এগুতে গিয়ে বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে, আবার উঠে দাঁড়িয়েছে সৎ আর সততার বলে। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে যারা দুরভিসন্ধিতে মেতে সাহয্যের হাত বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে নিরবে, কৌশলে। তবুও মাথা নিচু করেনি দারিদ্র্যের কাছে, ক্ষুধার কাছে, এমনকি এই সমাজের কাছে। নিজেদেরকে বিকিয়ে দেয়নি অর্থের লালসার কাছে। আধপেটা খেয়ে জীবন অতিবাহিত করেছে, একখানা রুটি আর কচুশাক সিদ্ধ বা কচুর ফুল ভাজি দিয়ে উদর জ্বালা মিটিয়েছে, তবু চরিত্র স্খলন হতে দেয়নি।পরিবারের সদস্যদের ভালো থাকার বিনিময়ে পরিবারের একজন নিজেকে বলিকাষ্ঠে সঁপে দিয়েছে তবুও বিপথে যায়নি কখনো। পরিবারটির যাপিত জীবনের যাপনধারা লেখক পরম মমতায় ভালোবাসা আর স্নেহের অপত্য ধারায় তুলে ধরেছেন। কলমের কালি যেন চোখের জলের অমিয়ধারা হয়ে ঝরে পরছে পাঠকের কপোল বেয়ে।
সংসারের রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই এক একজন অভিনেতা। কেউ কম, কেউ বা একটু বেশি। যাপিত জীবনে, জীবন অতিবাহিত করতে গেলে নীরব অভিনয় করে যেতে হয় সকলকে। কখনো বাবা, মা, কখনো আবার সন্তানকে। শূন্য হাঁড়িতে নারকেলের মালার চামচে টুংটাং শব্দ করে যখন মা বলতেন, ‘ভাত আর নিবি’?
তখন সন্তানেরাও আধপেটা খেয়ে মুখে পেট ভরার ঢেঁকুর তুলে বলতো, ‘নাহ্ পেট ভরে গেছে!’ দারিদ্রতার কষাঘাতে এমন সুনিপুণ, সুদক্ষ অভিনেতা স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কে-ইবা সৃষ্টি করতে পারেন? হ্যাঁ আর একজন পেরেছেন! তিনি হলেন এই বইটির লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী।
তিনি তার সুনিপুণ দক্ষতায় পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন এইসব অভিনেতাদের। বইটি ঘিরে এমন কত শত বাবা, মা আর সন্তানদের সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতা আছে যা দেখতে হলে, জানতে হলে, পাঠককে অবশ্যই পড়তে হবে বইটা।
দারিদ্রতার কষাঘাতে ছোট কিশোর মনের সততা কখনো বিলাসিতার অবগাহনে ভেসে যায়নি বরং নিজের মনের গোপন ভালোবাসা স্বপ্ন ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়তে দিয়েছে। বাস্তবের মাটিতে ভালোবাসার বীজ বপন করেনি,
হৃদয়ের রক্তক্ষরণে স্বপ্নবিলাসে মন ভাসিয়েছে। কিন্তু কখনোই কঠিন ও কঠোর বাস্তবতার রং ঢুকিয়ে তার স্বপ্নকে বিবর্ণ করতে চায়নি বরং দূর থেকে ভালোবেসে ভালোবাসার মহারাজা সেজেই তৃপ্ত থেকেছে। প্রয়োজনে সংসার সামলানোর জন্য স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে কোদাল হাতে তুলে নিয়েছে। নিজের শখ বিসর্জন দিয়ে বাবার হাতে জমানো টাকা তুলে দিয়ে নির্মল আনন্দ উপলব্ধি করেছে। মায়ের দু’মুঠো গম ভাজা খেয়ে সারাদিন পার করা, ছোট ভাইবোনদের বুনো আলু পুরিয়ে খেয়ে গলা চুলকানোর পরিবর্তে তৃপ্তির আস্বাদন, রানু বুড়ির ভিক্ষার চাল এনে মায়ের ভাত রান্না এবং ক্ষুধা নিবারণ কিশোর মনে প্রভাব ফেলেছে! শুধু কি কিশোর মন! আমাদেরও অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছে বারবার!
স্বপ্ন সবাই দেখে। স্বপ্ন দেখা একটি সহজাত প্রক্রিয়া। তবে কিছু কিছু স্বপ্নও বাস্তবতার কঠিন শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যায়। কিশোর ওমর ফারুক স্বপ্ন দেখতো তার আব্বার একদিন অনেক টাকা হবে, সুরম্য, সুন্দর একটা বাড়ি হবে, চারপাশে থাকবে অড়হর আর শটির ঝোপ। থাকবে একটা পুকুর, পুকুরে ছিপ ফেলে
পাঙ্গাস মাছ ধরবে আর তার ভালোবাসার মানুষ রিনি, সেই মাছের চচ্চড়ি রান্না করবে। বিকেলে শটি ফুলের কান্ড তুলে বাঁশি বাজাবে ও আর রিনি মিলে। কঠিন বাস্তবতার কষাঘাতে, নিষ্ঠুর দারিদ্র্যের নিঃস্পেষণে সে জানত তার স্বপ্নগুলো হয়তো আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে, কখনো হয়তো সত্যিই হবে না। তাই তো তার বেদনা বিভাষিত হৃদয়ের হাহাকার বেরিয়ে আসে ‘হতে পারে যাদের স্বপ্ন সফল হয় না তারাই কেবল স্বপ্ন দেখে।’ এ যে কতখানি কষ্টের, কতখানি হাহাকারের দীর্ঘশ্বাস অথচ কি নির্লিপ্ত আর সহজাত সারল্যের স্বীকারোক্তি যা কেবলই পাঠক হৃদয়কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় বারবার।
শুধু ওমর ফারুক কেন? ওর বড়ো বোন সাদিয়াও স্বপ্ন দেখেছিল গঙ্গাফড়িং কিংবা প্রজাতির স্বপ্ন। যে স্বপ্নগুলো প্রতিটি মেয়েই দেখে থাকে। একটা সুন্দর নিজস্ব গৃহকোণ হবে। ছোট-ছোট ভাইবোন, মা-বাবার জন্য কিছু করা, ভাই দুটোকে সাহেব সাজিয়ে কলেজে পাঠানো, মাকে শতরঞ্জি শাড়ি দেওয়া, এক ডজন কমলা কিনে সবাই একটা একটা করে কমলা খাওয়া, বাবার জন্য কিছু করা, সব কিছুই যে দারিদ্র্যের কষাঘাতে ম্লান হয়ে যেতে থাকে। তবুও থেমে যায়নি মেয়েটি। সংসারের প্রয়োজনে, প্রিয় মানুষজনের ভালো থাকার জন্য নিজের একান্ত ব্যক্তিগত স্বপ্নের তারাটা ফানুস বানিয়ে একটা দিবাস্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি। লেখকের ভাষায় ‘স্বপ্ন যখন ম্লান হয়ে জীবনে আসে, সেটা আর জীবন থাকে না। থাকে কেবলই বেঁচে থাকা। তবু সাদিয়া মেনে নেবে এই জড়জীবন। তার এই বেঁচে থাকার বিনিময়ে হয়তো জীবন পাবে পরিবারটা।’
এমন হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষক পিতা সন্তানের লেখাপড়া থামতে দেননি। কোনো বিলাসিতাই তাদের আটকে রাখতে পারেনি। খালি পায়ে, ছেঁড়া, ফুটো রঙচটা জামা পড়েই স্কুল-কলেজের গন্ডি পার করে দিয়েছে কামাল স্যারের সন্তানেরা। যে সন্তানদের ছেঁড়া জুতা ভেদ করে পা আর মাটি মিলেমিশে এক হয়ে যায়, সেই সন্তানদের তিনি পেট ভরে খাবার না দিতে পারলেও মানবিকতা, চরিত্রহীনতার অবক্ষয় ঘটতে দেননি। হয়তো শিক্ষক হিসেবে এখানেই তিনি সার্থক। হয়তো এভাবেই দারিদ্র তাঁদের সত্যিই মহান করে তুলেছে।
কোরবানি ঈদের সময় আশেপাশের বাড়ি থেকে আসা মাংসের টুকরোর অপেক্ষায়, সন্তানের পাতে এক টুকরো মাংস তুলে দেবার আশায়, সন্তানদের মুখে একটু হাসি দেখবার বাসনায় মা পেঁয়াজ রসুন বেটে রেখেছেন। আহারে জীবন! যাপিত জীবন! লেখকের ভাষায়, ‘অন্যের ভরসায় কী নিদারুণ প্রস্তুতি তাদের! আর কী নিখাঁদ আনন্দ!’ নিশ্চয়ই পাঠকের চোখ ঝাপসা হয়ে উঠবে। মনের গহীনে মেঘ জমে উঠবে তবুও লেখকের বলা থামবে না। তিনি আবার বলবেন, ‘তাঁরা আসলে আলু দিয়ে মাংস খান না, মাংস দিয়ে আলু খান, তাঁরা মাছ খান না, মাছের ঘ্রাণ দিয়ে শাক সবজি খান।’ তখন পাঠকের বুকের পাঁজর বেদনার নীলে নীল হয়ে যাবে। গুমরে গুমরে কেঁদে উঠবে মন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
‘আধখাওয়া দিন’ বইটি পড়তে গিয়ে মোহাবিষ্ট হয়েছি বারবার। এই বইটার সম্মোহনী শক্তি এতটাই প্রখর যে পাতার পর পাতা উল্টে গেছি, মন খারাপ হয়েছে, চোখে জল নেমেছে তবুও পড়ার আগ্রহ থামেনি। কষ্টের কষাঘাতের শেষ সীমানায় পৌঁছে মন আকুলি-বিকুলি করেছে, তবু বই ছেড়ে উঠতে মন চায়নি। লেখক হিসেবে এখানেই মাইনুল এইচ সিরাজীর সার্থকতা। তবে হ্যাঁ, বইটি জুড়ে এত হতাশা, দুঃখের স্রোতে না ভাসিয়ে কোথাও একটু সুখের আস্বাদন দিতেই পারতেন। পারতেন একটু শান্তির অলস ছোঁয়া দিতে। আসলে পাঠক হিসেবে একটু সুখ বা সুখের বিন্দুমাত্র নিশানা দেখতে চাওয়া অবাস্তবিক কিছুই নয়। কোনো পাঠকই চায় না পুরো বই জুড়ে কষ্টের পাহাড় ডিঙোতে, মনের গহীনে বিষাদের করুণ রাগিনী বাজাতে। কিন্তু কখনো কখনো নিষ্ঠুর বাস্তবতা আসলেই সুখের মুখ দেখাতে চায় না। তারপরও এখানে লেখকের নিজস্ব একটা ধারা বহমান থাকে। তিনিই নির্ধারণ করেন কীভাবে গল্পের প্লট সাজাবেন, কীভাবে তার সৃষ্ট চরিত্র চিত্রায়ণ করবেন। তবুও পাঠক হিসেবে এতটুকু চাওয়া একদম বেশি ছিল কি?
বইয়ের প্রচ্ছদ খারাপ লাগেনি। শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল তার সবটুকু দিয়েই প্রচ্ছদ করেছেন। গল্পের প্রেক্ষাপটে নামকরণ যথার্থই মনে হয়েছে। অবশ্য মনে হয়েছে বললে কম বলা হবে। আসলে নামকরণ সার্থক হয়েছে বলাই শ্রেয়।
একজন শিক্ষক, যিনি মানুষ গড়ার কারিগর, যার ছাত্ররা ভবিষ্যতের এক একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার; অথচ, সেই তিনিই যখন সন্তানের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারেন না এর থেকে বড়ো বঞ্চনার আর কি হতে পারে আমাদের সমাজে? তবে হ্যাঁ শত বঞ্চনার মাঝেও নিজের সন্তানদের অবক্ষয় হতে দেননি তিনি। অবক্ষয়িত জীবনযাপন করেনি তাঁর পরিবার। শত দুঃখ-কষ্টেও যাপিত জীবনের চলমানতা থেকেছে সৎ ও সততার পথে।
‘বিষাদের অশ্রুজলে নীরবের মর্মতলে
গোপনে উঠুক ফলে হৃদয়ে নূতন বানী।’
অতি দুঃখ, দুর্দশা আর হতাশার মাঝেও নতুন কিছু পাবার আশায় বইটা পড়া যেতেই পারে।
হয়তো কোনো পরশপাথর-এর প্রভাব পরতেই পারে আপনার জীবনে।
লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী একটি দরিদ্র পরিবারের যে চিত্র তিনি কলমের আঁচড়ে এঁকেছেন তা একবাক্যে অসাধারণ বললেও লেখকের মানসিকতাকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে না। হয়তো তিনি জীবন দিয়ে পার করেছেন এই কষ্টের সিঁড়িগুলো, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন এই হতাশা, তাই হয়তো এত সুন্দর, সুনিপুণ দক্ষতার হস্ত প্রসারিত করতে পেরেছেন তার সৃষ্টিতে।
বইটি না পড়লে বুঝতেই পারতাম না ক্ষুধা, দারিদ্র্যেরও এত সুন্দর একটা বিষাদময় অথচ নিগুঢ় সত্যের মাপকাঠিতে মাপা সৌন্দর্য বিরাজমান, ঠিক শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারের রূপ’-এর মতো। বইটি পড়েছিও বেশ কিছু দিন আগে। রিভিউ লেখার সাহসই সঞ্চয় করতে এতদিন লেগে গেল। মনে হচ্ছে আমি যেন একটা বড়ো দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছি।
প্রিয় পাঠক আমার দুঃসাহসিকতার মানদণ্ড না হয় লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী এবং আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
পরিশেষে বলব, লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী যেমন বইটা শুরু করেছিলেন অভুক্ত কিছু মানুষের আধাপেটা খাওয়ার দৃশ্যপট দিয়ে, নিম্নবিত্ত সংসারের মা-বাবা আর সন্তানদের সাধ্যমত অভিনয় দক্ষতার কৌশলে নিষ্ঠুর অথচ নিগুঢ় সত্যের অবতারণা করে, তেমনি শেষ করেছেন এক সত্যের তোরণ ভেদ করা নিদারুণ স্বপ্নের মাধ্যমে। বইজুড়ে যেমন ক্ষুদার যন্ত্রণা, সামাজিক কূটচাল, সমাজের মাথাদের লোলুপতা, কিছু মানুষের পশুতুল্য আচরণ, জীবন যুদ্ধের অপরিসীম দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন, তেমনি আবার সত্য ও সততার বহ্নিশিখার আলোকে দারিদ্র্যকে করে তুলেছেন মহান। তিনি দারিদ্র্যের কষাঘাতে কোনো অবক্ষয় তুলে আনেননি বরং স্বপ্নবিলাসী মনগুলোকে নিষ্ঠুর বাস্তবতার শিকল ছিঁড়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা জুগিয়েছেন। ওমর ফারুকের স্বপ্নে দেখা ‘একটা নতুন ঘর, একটা নতুন ঘাট’-এর মাধ্যমে একটা নতুন জীবনের নব সূচনা শুরু হতে পারত নতুনভাবে, নতুনরূপে। আবু বকর নাই বা ডাকত ওকে!
প্রিয় পাঠক,গল্পের শেষ ধারাবাহিকতায় রবী ঠাকুরকে স্মরণ না করলে মনে হয় অনেক কিছুই বাদ থেকে যাবে…
‘ওরে জাগায়ো না, ও যে বিরাম মাগে নির্মম
ভাগ্যের পায়ে।
ও যে সব চাওয়া দিতে চাহে অতলে জলাঞ্জলি।। দুরাশার দুঃসহ ভার দিক নামায়ে,
থাক ভুলে অকিঞ্চণ জীবনের বঞ্চনা।।
আসুক নিবিড় নিদ্রা,
তামসী তুলিকায় অতীতের বিদ্রুপ বানী দিক মুছায়ে
স্মরণের পত্র হতে।
স্তব্ধ হোক বেদন গুঞ্জন
সুপ্ত বিহঙ্গের নীড়ের মতো— আনো তমস্বিনী
শ্রান্ত দুঃখের মৌন তিমিরে শান্তির দান।।”
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD