দেশের অন্যতম সেরা সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ভাষাচিত্র। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, নতুনত্ব আর আদর্শিক ভাবনা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রাপথ চলমান। সামাজিক যোগাযোগ্যমাধ্যম ফেসবুকে ‘ভাষাচিত্র বুক ক্লাব’-নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে সারাদেশের বইপ্রেমী পাঠকদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র স্থাপনের অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই গ্রুপে পাঠকদের নিয়ে একটি ইউনিক আয়োজন পাঠক প্রোফাইল। পাঠকগণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের সম্পর্কে গ্রুপে পোস্ট দেন। নির্বাচিত পোস্টগুলো আমরা দেশের বই পোর্টাল-এ প্রকাশ করি। আজ প্রকাশিত প্রকাশিত হলো রুম্পা বিশ্বাস-এর প্রোফাইল
“যদি তারে নাই চিনি গো, সে কি…
সে কি আমায় নেবে চিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে?
জানি নে, জানি নে…”
রবি ঠাকুরের গানের মাধ্যমে পাঠকের প্রোফাইল তুলে ধরলাম, যদিও কয়েক শ শব্দ দিয়ে নিজেকে নিয়ে বলা সম্ভব না। যদি সম্ভব হতাে তাহলে ভালো সম্পর্কগুলো মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে যেত না।
আমি রুম্পা বিশ্বাস। বৃষ্টিস্নাত কোনাে এক দুপুরে যার পৃথিবীতে আগমন। দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ১৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবার। নামের অক্ষর অনুযায়ী তুলা রাশির জাতক, যদিও সেরকম রাগী আমি নই, তবে শান্তশিষ্ট আর কিছুটা রগচটা টাইপের।
জন্ম থেকে চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে ওঠা। বলা যায় এটা আমার প্রাণের শহর। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় নিজ বাড়ি হলেও খুব সময় কাটাতে পারিনি সেখানে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি, ২০১৬ সালে সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে এখনও সিটি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। জানি না স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, তারপরও স্বপ্ন দেখি।
ছোটো থেকে একাডেমিক পড়ালেখার খুব একটা চাপ নিতে হয়নি আমাকে, ইচ্ছেমতাে মনের আনন্দে সময়গুলো উপভোগ করতে পেরেছি। বাবার সাথে ঘুরতে যাওয়ার পথে কখনও কখনও ছোটাে বই কিনে হাতে ধরিয়ে দিত বাবা। বইয়ের মধ্যে ছিল ‘রাক্ষস খোক্কসের গল্প’, ‘মিনা রাজুর মজার গল্প’, ‘কুমিরের বাচ্চা ও চাঁদের বুড়ির গল্প’সহ আরও অনেক বই, যা এখন স্পষ্টভাবে মনেও নেই। আর সেই তখন থেকে বাবার সাথে মেলায় বা ঘুরতে গেলে বই কেনার জন্য বায়না করতাম। বলা যায় বাবার হাত ধরেই বই পড়ার অভ্যেস তৈরি হয়। মাধ্যমিকে থাকাকালীন আমার যতটুকু মনে পড়ে ডঃ মোহিত কামাল স্যারের ‘মন’ বইটা আমার জন্য আলাদা একটি মন তৈরি করেছে। আমার ছোট্ট মনে সেদিন এই বই কি বুঝিয়েছিল ঠিক জানি না তবে বই পড়ার আবেশ তৈরি করেছিল। এরপর একে একে হুমায়ুন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলনের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। স্কুলজীবনে থাকাকালীন একবার পানিশমেন্ট পর্যন্ত পেয়েছি লুকিয়ে বই পড়ার জন্য। সেদিন ভয়ে ভয়ে বাসায় ঢুকলেও কোনােরকম যুদ্ধ আমার সাথে হয়নি। সেদিন থেকেই বই পড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে গেল। কিশোর উপন্যাসে আলাদা একটা উত্তেজনা পেতাম।
ক্রমান্বয়ে উচ্চ মাধ্যমিক সময় থেকে জায়গা করে নিলাে আনিসুল হক, হরিশংকর জলদাস, শরৎচন্দ্র, সমরেশ মজুমদার, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফাসহ আরও অনেকে। নতুন লেখকদের বই পড়তেও খুব পছন্দ করি। তবে সাহিত্য রচনার মধ্যে উপন্যাস আমার খুব ভালো লাগে। আমার পছন্দের বইগুলো হলো : ‘সাতকাহন’, ‘শাপমোচন’, ‘মা’ (ম্যাক্সিম গোর্কি), ‘গর্ভধারিণী’, ‘পরিণীতা’, ‘পথের পাঁচালী’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘চোখের বালি’, ‘শেষের কবিতা’, ‘একলব্য’, ‘জলপুত্র’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘বহুব্রীহি’, ‘দেবী’সহ আরও অনেক অনেক বই।
আমাদের হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ কিন্তু চেতনায় নজরুলকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হয়। দৈনন্দিন জীবনে আহত মনে সজীবতা ফিরিয়ে আনতে রবীন্দ্র বা নজরুল সঙ্গীত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে আমার। প্রিয় কবির তালিকায় আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মহাদেব সাহা, বিনয় মজুমদার, শঙ্খ ঘোষ, পূর্ণেন্দু পত্রী, জয় গোস্বামী, কাজী নজরুল ইসলাম, শুভ দাশগুপ্ত, হেলাল হাফিজসহ আরও অনেকে।
রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের অমলের জন্য এখনও মন খারাপ হয় আমার।
অবসর সময়টুকু কেটে যায় কবিতা পড়ে, ছবি এঁকে বা বই পড়ে।
পাহাড় আমার খুব পছন্দের, সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এখনও অনেক দেখার বাকি আছে, নিজের দেশের প্রতিটি জায়গা ঘুরে দেখতে চাই ঘুরন্তিপনা হয়ে।
বই পড়তে ভালোবাসি বলে আমার গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে অনেকে বই উপহার দিয়ে থাকে। প্রাপ্তির তালিকায় বইয়ের সংখ্যা অনেক। যদিও ব্যক্তিগত একটি লাইব্রেরির স্বপ্ন দেখি অনেকদিন থেকেই। গত বছর থেকে স্বপ্নের কাজে হাত দিয়েছি। স্বপ্ন এখন সফলতার পথে।
“অন্তরে অতৃপ্তি রবে
সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।”
রবীন্দ্রপ্রেমী হওয়ায় শেষটাও করলাম রবীন্দ্রনাথ দিয়ে।
[ আপনি যদি বইপ্রেমী পাঠক হয়ে থাকেন, আপনার সম্পর্কে, আপনার বই পড়া সম্পর্কে, আপনার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ পাঠক প্রোফাইল পাঠিয়ে দিন আমাদের ই-মেইলে। আপনার প্রোফাইল প্রকাশিত হবে আমাদের অনলাইলে। এছাড়া বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD