নিঝুম ভূঁইয়া
ছোটোবেলা চাচা চৌধুরী পড়তে পড়তে সাবুর জগতে হারিয়ে যেতাম। তারপর তিন গোয়েন্দা। কিশোর, রবিন আর মুসার সঙ্গে নিজেও যেন রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়তাম। কি নেশা! নতুন ভলিউম আসার অপেক্ষায় থাকতাম। তারপর মাসুদরানা। ক্লাস চলাকালীন সময়েও পাঠ্যবইয়ের ভেতর গল্পের বই রেখে পড়তে গিয়ে কতবার যে ম্যামের হাতে ধরা খেয়ে পানিশমেন্ট পেয়েছি! মায়ের বকুনি ‘লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারাদিন গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকা।’
মিষ্টিমধুর সেই দিনগুলো পার হয়ে কলেজে পা রাখতেই বেইলিরোডের লাইব্রেরিগুলো হয়ে ওঠে প্রিয় প্রাঙ্গণ। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পে হারিয়ে গেলাম যেন। শরৎসমগ্র, বঙ্কিমসমগ্র, বুদ্ধদেব পড়া শুরু।
প্রকৃতি আমার ভীষণ প্রিয়। বৃষ্টির গান, বাতাসের শব্দ, সাতরঙা আকাশ কাঁঠালিচাঁপা ফুল। এসবে যেন নিজেকে খুঁজতে শুরু করলাম। ফলে বুদ্ধদেব গুহ’র লেখা প্রিয় হয়ে উঠল। মাধুকরী, রাগমালা, সবিনয় নিবেদন এসবের ভেতর যেন হারিয়ে গেলাম গভীরভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে যেতে পরিচয় হয় সঞ্জীব চট্টপাধ্যায়ের ‘লোটাকম্বল’-এর সঙ্গে। মনে হলো এ যে আমি! আমার মতোই দুটি সত্তা সারাক্ষণ দ্বন্দে ভুগতে থাকে।
পরবর্তীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হই। প্রতি সোমবার ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে বই নেই। পরিচয় ঘটে বিশ্বের নামকরা লেখক, নোবেল বিজয়ীদের লেখার সঙ্গে। পূর্ব বাংলা আর পশ্চিমা লেখকদের ছাড়িয়ে এবার বিশ্বসাহিত্য নিয়ে পড়া। ফিওদর দস্তয়েভস্কি’র ‘বঞ্চিত লাঞ্চিত’ মনে দাগ কাটে। নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলো হয়ে ওঠে প্রিয় জায়গা। তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’ পড়ে আন্নার শক্তিকে নিজের ভেতর দেখতে পাই যেন। ধীরে ধীরে ঢুকে যাই পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য আলকেমিস্ট’-এর রহস্যের ভেতর। তুরস্কের লেখিকা এলিফ শাফাকের লেখার জাদুর ভেতর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক কবি জালালউদ্দিন রুমি হয়ে ওঠে প্রিয় কবির তালিকায়।
কত্ত কত্ত বই পড়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। পড়তে পড়তেই নিজের ভেতর লেখক সত্তাটা উঁকি মারছিল। লেখার চেষ্টা করি। লেখার ভেতর কোনো এক অজানা ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে থাকি। লেখা হচ্ছে মনের স্বাধীনতা। প্রকৃতির মোহনীয় সঙ্গীতে নিজেকে আবিষ্কার করা,গভীর উপলব্দিবোধকে ভাষায় প্রকাশ করা।
একজন ভালো লেখক হতে হলে পড়ার, জানার কোনো বিকল্প নেই। শুধু এপার ওপার বাংলার লেখক নয়, জানতে হবে বিশ্ব সাহিত্যকে।
সবশেষে, গতবছর বাবাকে হারিয়েছি। প্রথম ও একমাত্র বই প্রকাশিত হবার পর বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। বাবার সে কি খুশি! বাবা ভীষণ বই পড়তে পছন্দ করতেন। নতুন কোনো বই হাতে নিলেই বাবার কথা মনে পড়ে খুব।
নতুন প্রজন্মের বই পড়া প্রসঙ্গ
ভবিষ্যত ও নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করতে হলে নিজেকে আগে বদলাতে হবে। ঘুমানোর সময় মোবাইল নয়, নিজে হাতে নিন বই। ছোটো ভাই-বোন বা সন্তানের হাতে তুলে দিন বই। ধীরে ধীরে তাদেরও অভ্যাস হয়ে যাবে। আমার বই পড়ার জার্নিটা কিন্তু আমার পরিবার থেকেই পাওয়া। ভাই, বাবা ভীষণ পড়ুয়া ছিল। বড় ভাই-ই সবার আগে আমার হাতে বই তুলে দিয়েছিল।
শেষ কথা। সবার আগে নিজে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
[ আপনি যদি বইপ্রেমী পাঠক হয়ে থাকেন, আপনার সম্পর্কে, আপনার বই পড়া সম্পর্কে, আপনার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ পাঠক প্রোফাইল পাঠিয়ে দিন আমাদের ই-মেইলে। আপনার প্রোফাইল প্রকাশিত হবে আমাদের অনলাইলে। এছাড়া বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD