জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে বহু পাঠাগার দেখার সুযোগ হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। কোনো পাঠাগারের নির্মাণ সৌকর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কোথাও-বা অভিভূত হয়েছি বইয়ের সংগ্রহ ও সমারোহ দেখে। প্রতিকূলতার তীব্র ধূলিঝড়ের মধ্যেও শতাধিক বছর ধরে স্বগর্বে টিকে আছে এমন একটি পাঠাগার অচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে আমার জীবনের সঙ্গে।
কিন্তু রাজধানীর কয়েক লাখ প্রান্তিক বাসিন্দা অধ্যুষিত কড়াইল বস্তির জটিল গোলকধাঁধার ভেতরে আনুমানিক ১০ ফুট বাই ১৫ ফুট পরিসরের খুপড়ির ভেতরে (যার জন্য মাসে ভাড়া গুনতে হয়ে সাড়ে ছয় হাজার টাকা) গত সোমবার যে পাঠাগারটি দেখে এলাম তার সঙ্গে আর কোনো পাঠাগারের তুলনা চলে না। যাব কি যাব না তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে, এ পাঠাগারটি না দেখলে আমার স্বদেশদর্শন অপূর্ণই থেকে যেত। ষোলো আনাই মিছে হয়ে যেত আমার সব জানা।
সদ্যসমাপ্ত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই/সোনার মানুষ হই’ কার্যক্রমে যে ১০টি পাঠাগার অংশ নিয়েছিল ‘শহিদ রুমী পাঠাগার’ তার অন্যতম। ব্যতিক্রমী এ পাঠাগারটির কার্যক্রম বস্তির শিশু-কিশোরদের নিয়ে। তারাই আবার এ পাঠাগারটির ধারক, বাহক ও স্বপ্নদ্রষ্টা। বহু বিস্ময় আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল এ পাঠাগারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ছিল এমআইএসটি’র আর্কিটেকচারের তরুণ শিক্ষক সাদিয়া শারমিনের সক্রিয় উপস্থিতি।
কোনো এনজিওর পৃষ্ঠপোষকতা নেই। নেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তালিকাভুক্তিও। শুধু নিজের চেষ্টায় নিজেদের অর্থে কিছু কিশোর-তরুণ (যাদের বেশিরভাগই কিশোরী) চারপাশে মরুর তপ্ত তাণ্ডবের মধ্যে বইকেন্দ্রিক যে মরুদ্যানটি গড়ে তুলেছে তা যুগপৎ চর্মচক্ষে ও হৃদয়চক্ষে না দেখলে আমার হয়তো সত্যিকারের বাংলাদেশকে চেনা হতো না। জানা হতো না তার অদম্য স্বপ্ন ও সংগ্রামকে। পরে এ নিয়ে বই পত্রিকায় বিশদভাবে লিখব।
আপাতত শুধু এটুকু বলি, স্বউদ্যোগে গড়ে তোলা এ পাঠাগারের কিশোর-তরুণদের চোখেমুখে যে সংকল্প ও স্বপ্নের দ্যুতি দেখে এসেছি তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশকে কেউ ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু যে সোনার মানুষের কথা বলেছিলেন-এরাই সেই সোনার মানুষ।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD