মনটা এখন ভীষণ ছটফট করছে! মনে পড়ে, তখন দৈনিক সমকাল বের হবে। শ্রদ্ধেয় প্রয়াত গোলাম সরোয়ার ভাই সম্পাদক। আমার চাকরির দরকার। বন্ধুর বন্ধু সরোয়ার ভাইয়ের প্রিয় জামাতা হাবিব ভাইয়ের কাছে গেলাম পল্টনে। হাবিব ভাই স্বভাবসুলভ আমার সিভিটা নিয়ে দুজন লোকের কাছে দিলেন। একজনের কথা বলব না, অন্যজনের নাম মিজানুর রহমান খান। এক পর্যায়ে অফিস নেওয়া হলো ইউটিসি ভবনে (বসুন্ধরা সিটিমলের পাশে)। সেখানে নিয়োগ হবে।
মিজান ভাই একদিন আমাকে পরীক্ষা করার জন্য ইউরোপিয় দর্শনের উপর একটি লেখা অনুবাদ করতে দিয়ে বললেন, এটা কাল করে আনুন। আমি পরদিন সেটি অনুবাদ করে তার কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি রেখে দিলেন। তখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে বেশি কথা বলেন না। আমি ভয়ে ভয়ে থাকলাম, অনুবাদ পড়ে কী বলেন কে জানে! তার পরের দিন আবার অফিসে ঢুকতেই মিজান ভাই উচ্ছ্বসিত হয়ে রিসিভ করলেন। এরপর এমন এক অবস্থা তৈরি হলো যে চাকরির জন্য যেই সিভি নিয়ে আসে, মিজান ভাই আমার কাছে দিয়ে বলেন, দেখেন তো চলবে কিনা! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমার সুপারিশেই সেখানে অন্তত চারজনের চাকরি হয়েছিল। অথচ আমিও তখন নোভিস। তার সুপারিশেই আমার সিনিয়র সাব-এডিটর পদে চাকরি হয়।
এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার সুমিষ্ট সম্পর্ক। এক পর্যায়ে তিনি সমকাল ছেড়ে প্রথম আলোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলেন। আমি ভাঙা হৃদয় নিয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি মিষ্টি হাসতে হাসতে বললেন, সংবাদপত্রের এটাই নিয়ম। আমি সাত নাম্বার ছাদের নিচ থেকে আট নাম্বার ছাদের নিচে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আপনিও তাই করবেন।
মিজান ভাই সমকাল ছাড়ার পর আমার সেখানে চাকরি করাই মুশকিল হয়ে গেলো। কয়েকদিন পর আমি বেকার অবস্থায় সমকাল ছেড়ে চলে আসলাম স্বেচ্ছায়। আমিও অনেক ছাদ ইতোমধ্যে পরিবর্তন করেছি। মাঝে একবার ছোট একটি পত্রিকায় কাজ করি। মিজান ভাইয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলাম। তিনি কথা বার্তা বলে আমাকে বললেন আসুন। সঙ্গে মতি ভাইয়ের রুমের সামনে নিয়ে গেলেন। শুধু বললেন, আপনাকে মতি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করাব। কেন আমি জানি না। কিন্তু মতি ভাই তখন ঢাকার একজন খ্যাতনামা সিনিয়র নারীর সঙ্গে লাঞ্চ করছিলেন। আমি মিজান ভাইকে আমাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি বোধ করাম। বললাম, ভাই, আমি আরেক সময় আসব। কিন্তু আর যাইনি।
পরে বিভিন্ন পত্রিকায় জয়েন করে তাকে ফোনে জানিয়েছি। ভীষণ খুশি হয়েছেন। একদিন দেখি হেঁটে যাচ্ছেন। আমাকে দেখেই থামলেন। কুশল বিনিময়ের পর ধরে নিয়ে গেলেন কুপার্স নামের রেস্টুরেন্টটিতে। একসঙ্গে খেলাম। কী যে মিষ্টি স্বভাবের, পরিচ্ছন্ন মানুষ তা বলে বোঝানো যাবে না।
এই অসাধারণ মানুষটি এখন হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন যুদ্ধে লড়ছেন। অস্থির হয়ে আছি! মিজান ভাই, প্লিজ ফিরে আসুন! আপনার মতো পরিচ্ছন্ন, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ, মেধাবী সাংবাদিক আর কয়জন আছে ঢাকায় আমার জানা নেই। আপনি আমার ব্যক্তিগত চিন্তার সঙ্গে পরিচিত। সুতরাং আপনার কাছেই আমার দাবী, আত্মবিশ্বাস, শক্তি নিয়ে সুস্থ্ হয়ে উঠুন। আপনার অনেক কাজ বাকী!
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD