।। ওসমান গনি ।।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিভাবক। এদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও আপনার সরকার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীতে সমগ্র বিশ্ব যেখানে দিশেহারা, সেই রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে আপনি সমৃদ্ধিশালী করেছেন, বাংলার মানুষের সুখীজীবন নিশ্চিত করতে সর্বদা তৎপর থেকেছেন। আপনার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, অকৃত্রিম দেশপ্রেম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলবে- এ কথা এদেশের প্রতিটি মানুষের মতো এদেশের প্রকাশক সমাজও বিশ্বাস করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আপনার সর্বাধিক গ্রন্থের প্রকাশক। বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের উৎকর্ষ-সাধনে আপনার প্রকাশক বান্ধব সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রকাশনাশিল্পের রুগ্ণ চেহারায় কিছুতেই হাসি ফুটছে না। সরকার ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ কেন্দ্র করে এদেশের প্রকাশনাশিল্প আশার আলো দেখেছিল। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন বাংলার মানুষের মনে অভূতপূর্ব সাড়া ও আনন্দ জাগিয়েছিল। এই আনন্দ-আয়োজনে মহাসমারোহে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রকাশক সমাজও তাদের যথাসাধ্য বিনিয়োগ করেছিল প্রকাশনা-শিল্পে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর আকস্মিক ছোবল দেশের অন্যান্য শিল্পের মতো প্রকাশনাশিল্পেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। আপনি অবগত আছেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এদেশের প্রকাশনাশিল্পে নবপ্রাণ সঞ্চার করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বইপ্রেমী মানুষ এসে কোটি কোটি টাকার বই ক্রয় করে। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও তাতে লাভের চেয়ে প্রকাশকদের ক্ষতিই হয়েছে বেশি। কোভিড-১৯ এর প্রথম আঘাতেই এদেশের অনেক প্রকাশক তাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। অনেকগুলো অভিজাত বইয়ের দোকানও বন্ধ হয়ে যায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্প কঠিন এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বের সর্বত্র ত্রিশ কোটি বাঙালি পাঠক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই ত্রিশ কোটি পাঠকের চাহিদা পূরণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রকাশকগণ নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু তারা সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন না। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের পূর্বশর্তই হলো বই পাঠে দেশের সকল নাগরিককে উদ্বুদ্ধকরণ, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে উন্নয়নের ছোঁয়া অন্যান্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত করলেও গ্রন্থাগারগুলো অযত্ন-অবহেলায় দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে। বইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়াতে না পারলে- এ জাতি এক সময় মস্তিষ্কহীন জাতিতে পরিণত হবে বলেই শিক্ষাবিদ মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
কোভিড-১৯ এর প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কা এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকাশনাশিল্প। নিশ্চিত বিপর্যয়ের হাত থেকে প্রকাশনাশিল্পকে বাঁচাতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। যেমন- ১. বইকে জরুরি পণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়ে লক-ডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইয়ের দোকান খোলা রাখা, ২. এবারের অমর একুশে বইমেলায় যেসব প্রকাশক ক্ষয়ক্ষতি মেনেও মেলায় স্টল দিয়ে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন তাদের সবার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার জন্য ১০০ কোটি টাকার বই ক্রয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমগ্র বিশ্বই এখন একটি অভিনব যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই যুদ্ধে আপনার সঙ্গে এদেশের প্রকাশক সমাজও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আপনি শুধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়কই নন, আপনি একজন সফল লেখকও। একজন লেখক হিসেবে এদেশের প্রকাশনাশিল্পের সুবিধা-অসুবিধা সবকিছুই আপনি সম্যকভাবে অবগত। আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া মুমূর্ষু প্রকাশনাশিল্প বাঁচানো অসম্ভব। আপনার তড়িৎ সিদ্ধান্তের উপর এখন এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আমরা আশা করি, আপনি সময়োচিত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবেন।
ওসমান গনি
প্রকাশক, আগামী প্রকাশনী
ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD