‘এইসব লেখা তার মানে খুঁজে পাবে বলে আসে
শহরের শেষ ধাপে কবর সারির পাশাপাশি
এপিটাফগুলি তার অভিধা বাড়ায় সন্ধ্যাবেলা
নগ্ন অক্ষরের গায়ে মৃত বন্ধুদের হিম শ্বাসে’
—শঙ্খ ঘোষ
শব্দদের পাশাপাশি বসিয়ে আর কখনো হৃদয়ছোঁয়া কোনাে কবিতা লিখবেন না কবি শঙ্খ ঘোষ। জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে শক্তি-সুনীল-শঙ্খ-উপল-বিনয় এই পাঁচ কবিকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব। চারজন নক্ষত্রের পতন হয়েছিল আগেই। আজ তাদের স্বাক্ষাতে অনন্তের পথে পাড়ি জমালেন কবি শঙ্খ ঘোষ।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতবর্ষের চাঁদপুরে জন্ম নেন কবি শঙ্খ ঘোষ। অনন্ত নক্ষত্রবিথীতে যাত্রাকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯। তাই দীর্ঘদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এ বছর জানুয়ারিতেও একবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। গত ১৪ এপ্রিল সামান্য জ্বর নিয়ে কোভিড টেস্ট করান। ফলাফল, সংক্রমিত হয়েছেন নক্ষত্র।
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বাড়িতে নিভৃতবাস শুরু করেন। শুরুতে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও হঠাৎই অবনতি হয়। জরুরিভিত্তিতে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হলেও আজ ২১ এপ্রিল ২০২১ ঘুমের মধ্যে মুখ ঢেকে ফেলেন বিজ্ঞাপনে। সাড়ে এগারোটা নাগাদ ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন অধ্যাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন সাহিত্য সমালোচক ও রবীন্দ্র গবেষক এই কবি। অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ ও ১৯৯৯ সালে ‘রক্তকল্যাণ’ কবিতার জন্য দুই দুইবার সাহিত্য আকাদেমী পদক লাভ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ।
১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দেশিকাত্তোম ও ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মভূষণ- এ ভূষিত করেন।
কবি শঙ্খ ঘোষের মহাকাল যাত্রাকে সাহিত্যের ইন্দ্রপতন বলে আখ্যায়িত করছেন বাংলাসাহিত্য সংশ্লিষ্টরা। কোভিডে চলে যাওয়ার এই মিছিলে সর্বত্র সৃষ্টি হচ্ছে শূণ্যতা, এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD