শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে বৃক্ষরোপণ আমার জীবনের মহার্ঘ স্মৃতিগুলোর একটি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংস্কৃতিপ্রেমী জনপ্রতিনিধি র. আ. ম. উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে পাশে নিয়ে ঐতিহাসিক চত্বরটিতে একটি বকুলগাছ লাগাতে পেরে আমি খুব আনন্দিত হয়েছিলাম একদিন।
দল কিংবা মার্কা নয়, যে-কোনও নির্বাচনকালে আমি জনমনস্পর্শী প্রার্থী বুঝি।
Obaidul Muktadir Chowdhury একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনে আহত হয়েছিলেন। আমি যে-শিক্ষাঙ্গনে উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া করেছি, সেই ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের প্রথম নির্বাচিত জিএস ছিলেন তিনি। কাকতালীয়ভাবে তার স্ত্রী, মাউশির সাবেক মহাপরিচালক, অধ্যাপিকা Fahima Khatunও একই কলেজে পরবর্তীকালে শিক্ষকতা করেছেন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য সান্নিধ্যে ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে আসা মোকতাদির চৌধুরী সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকেন রাজপথে। বাঙলার হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে সারা বছর বাহ্মণবাড়ীয়াকে মাতিয়ে রাখেন বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। তার ঐকান্তিক পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় সাহিত্য একাডেমির ব্যানারে অনুষ্ঠিত বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব ও নবান্ন উৎসবে গিয়ে উপলব্ধি করেছি, নষ্ট সমকালে তিনি কতটা প্রয়োজনীয় ও প্রশংসার দাবিদার। ওই অনুষ্ঠানে কবি Akhter Uz Zaman-এর কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপির পাঠোন্মোচন ছিল দেশে প্রথম জনসমক্ষে পাঠে পাঠে কোনও বইয়ের প্রাকপ্রকাশনা ইশতেহার।
দল কিংবা মার্কা নয়, যে-কোনও নির্বাচনকালে আমি এমন জনমনস্পর্শী প্রার্থী বুঝি।
সংস্কৃতির মতো শিক্ষারও পৃষ্ঠপোষক মোকতাদির চৌধুরী। তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চিনাইর শিক্ষাগ্রাম এক ছোটখাটো শান্তিনিকেতন। সেখানে প্রতিবছর বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শিশুমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় বৃত্তিপ্রদান করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেধাবী শিক্ষার্থীদের। জেলাশহরটির প্রাণকেন্দ্রে ভাষাশহিদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা চত্বর নির্মাণ মোকতাদির চৌধুরীর এক অনন্য কীর্তি। সেখানে বাঙলার হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়মিত মোহনা রচনা করে। সংস্কৃতিকর্মীরা ডাকলে তিনি নিজ জেলার বাইরেও পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে দেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কবি ও কবিতাপ্রেমিদের উদ্যোগে ময়মনসিংহে পুনঃস্থাপিত হয়েছিল ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দের স্মৃতিফলক, যা একাত্তরে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনি। র অা ম উবায়ুল মোকতাদির চৌধুরী সম্পাদিত চিন্তাশীল কাগজ ‘মত ও পথ’ প্রগতিশীল কবি-লেখকদের প্রিয় কাগজ। তিনি নন্দিতা গুহ কিংবা Helal Uddin Hridoy অথবা Momin Hosain বা ইমরুল হাসনাত চৌধুরী সৈকত-এর মতো কৃতজ্ঞ এবং মনির হোসেনদের মতো অকৃতজ্ঞদের পার্থক্য বুঝলেও প্রকাশ্যে অন্যকে তা বুঝতে দিয়ে কাউকে খাটো করেন না। এত গুণে গুণান্বিত মানুষ এ যুগে বিরল।
দল কিংবা মার্কা নয়, যে-কোনও নির্বাচনকালে আমি এমন জনমনস্পর্শী প্রার্থী বুঝি।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে নৌকা প্রতীকে তৃতীয়বারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। জনপ্রতিনিধি অনেক দেখেছি। তার মতো বৃক্ষপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রাণ ও শিক্ষানুরাগী সজ্জনপ্রতিনিধি এ যুগে বিরল। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাশহরের প্রাণকেন্দ্রে ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে ভাষাচত্বর প্রতিষ্ঠা তার অনন্য কীর্তিগুলোর অন্যতম। শুরুতেই উল্লেখ করেছি, ওই চত্বরে তাকে পাশে নিয়ে বৃক্ষরোপণ আমার মহার্ঘ স্মৃতিগুলোর একটি। তাই, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মানুষ না হয়েও, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এই মানুষটির বিজয় কামনা করি।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD