পৃথিবী মানেই রহস্যের মায়াজাল। কে জানে স্বার্থের কারণে কখন আপনজনই সব কিছু কেড়ে নেবে। রক্তে সম্পর্কের মধ্যেও কতটা নিকৃষ্ট ব্যবহার করতে পারে, সেটাই গল্পের কাহিনীতে রূপান্তর করেছেন লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস।
ঘরকুনো আবিরের চাকরির মাধ্যমে গল্পের কাহিনী শুরু হয়। চয়নের ছোট মামা আবিরের চাকরির সুবাদে চয়নও আবির রাঙামাটিতে যায়। কিন্তু যে ছেলে ঘর থেকে বেরই হয় না, সে কী পারবে নিরাপদে রাঙামাটি পৌঁচ্ছাতে? যে পরিচিতার কাছে চয়নদের যাওয়ার কথা ছিল, পৌঁচ্ছানোর পর জানা যায় বহু বছর আগেই তিনি মারা গেছেন। তাহলে অচেনা শহরে থাকবে কোথায় চয়ন ও তার মামা!
ঘটনাক্রমে এক চায়ের দোকান থেকে জানতে পারে ঐ এলাকার এক রাজা অতিথিকে রাজকীয় মর্যাদায় রাজমহলে স্থান দেয়। অনেক কাটখর পুড়িয়ে অবশেষে চয়ন ও আবির রাজার সাথে দেখা করে স্থান করে নেয় তার রাজমহলের অতিথিশালায়। রাজমহলে ভালোই দিন কাটছিল আবির ও চয়নের। কিন্তু লোকে বলে সেখানে মাঝরাতে মৃত মহারাণীর আত্মা ঘুরে বেড়ায়। কিছুদিন পর চয়ন আবিরও দেখতে পায় রাণীর আত্মাকে।
রাজার ছোট্ট ছেলে নীলমণি বহুবছর আগে নিখোঁজ। বর্তমানে রাজমহলে জুলেখা, পাহাড়াদার রামশরণ, রাজার বোনপো তিলক, ও নায়েব থাকে। নীলমণি কী সত্যি মারা গিয়েছে না এখনও বেঁচে আছে? রাণীর আত্মা সেজে কেউ সম্পদের লোভে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে না তো? কিন্তু কে সে!! আর ঝিনুক নামের মেয়েটায় বা কে! আবির আর চয়ন কী বেঁচে ফিরতে পারবে রাজপ্রাসাদ থেকে?
রাজার সাথে এত বছর যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কী এবার জনসম্মুখে আনতে পারবে আবির চয়ন? ভয়ংকর পাতাল ঘরেই বা কে থাকে!!
সব রহস্য কী উদঘাটন করতে পারবে চয়ন ও তার মামা! জানতে হলে টানটান উত্তেজনায় শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে হবে পাঠকদের।
কোনো লেখার ভাষাশৈলী ও শব্দচয়ন সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে কথা বলাটাকে আমার কাছে দুনিয়ার অন্যতম জটিলতম ও দুরূহ কাজ বলে মনে হয়। কিন্তু উক্ত বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে এবার সে কাজটাই করতে হচ্ছে। যেকোনো রচনার ক্ষেত্রে যেসব প্রধান শিল্পগুণ রয়েছে, তার মধ্যে প্রাঞ্জলতা অন্যতম। প্রাঞ্জলতা না থাকলে কোনো সাহিত্যকর্ম-ই আজকাল আর সেভাবে উঁচুদরের সাহিত্য মানের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। সেদিক থেকে এই উপন্যাসটিকে সার্থক বলা চলে। উপন্যাসটি মূলত বাংলা ভাষার চলিত রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এতে সাহিত্যমান কোথাও-ই বিন্দুমাত্র নষ্ট হয়নি। এমন মুন্সিয়ানার পরিচয় সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি-দাওয়া রাখে। কিছু কিছু জায়গায় বাংলা হরফে ইংরেজি বাক্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও তেমন কোনো জটিলতা চোখে পড়েনি আমার। এককথায়, ভাষার প্রাঞ্জলতা রক্ষার্থে ঔপন্যাসিকের চেষ্টা সত্যিকার অর্থেই পাঠকের নজর কাড়বে। উপন্যাসটির অন্য পাঠকেরা এই ব্যাপারে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন না বলে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে।
তবে কিছু কিছু ছোটখাটো বিচ্যুতি পাঠক হিসেবে ভালো লাগেনি নিজের কাছে। কয়েকটা ভুল বানান একজন পাঠক হিসেবে নজর এড়ায়নি। সাধারণত মুদ্রণজনিত কারণে এই ভুল হয়ে থাকে বলে এর পেছনে সাহিত্যিকের কোনো ভূমিকা কিংবা অবদান থাকে না। তবুও এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরেকটু সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল এড়ানো সম্ভব। বইয়ের বাঁধাই ও প্রচ্ছদ নিয়ে দু’একটি কথা না বললেই নয়। বাঁধাই খুব ভালো ও মজবুত হয়েছে। বইয়ের প্রচ্ছদটি গল্পের সাথে মিল রেখে চমৎকার ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আমাদের চারপাশে ঘটে চলা ব্যাপারগুলোই অরুণ কুমার বিশ্বাস তার বইয়ের ক্যানভাসে তুলে এনেছেন, সুনিপুণ শব্দের জাল বুননের মধ্য দিয়ে।
সবমিলিয়ে, দারুণ এক উপন্যাসের নাম “ভয়ঙ্কর পাতালঘর”। প্রতিটি পাতায় তুমুল সাসপেন্সে ভরপুর এই উপন্যাস পাঠককে শেষ পাতা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এর ঘটনার বিন্যাস আপনাকে বই ছেড়ে কিছুতেই উঠতে দিবে না।
বই : ভয়ঙ্কর পাতালঘর
লেখক : অরুণ কুমার বিশ্বাস
প্রকাশনী : অনিন্দ্য প্রকাশ
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
মূল্য : ২০০ টাকা
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD