থ্রিলার ফেস্টের চতুর্থ দিনের আলোচনা জমে উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়া, পাঠকের চাহিদা এবং বাংলা থ্রিলার নিয়ে। এদিন ছিল দুটি আলোচনা পর্ব। প্রথম পর্বের বিষয় ছিল ‘জীবন যখন থ্রিলার বইয়ের পাতা’। আলোচক ছিলেন দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং রাজীব সরকার। কথা সমন্বয়ে ছিলেন তানিয়া কুমার।
দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় পেশায় সাংবাদিক এবং দশটিরও বেশি থ্রিলার গ্রন্থের লেখক। একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সমসময়ে সাংবাদিকতা এবং সংবাদে এত থ্রিলিং এলিমেন্ট যুক্ত হয়ে উঠেছে যে থ্রিলার লেখকদেরও নিত্যনতুন টেকনিক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কীভাবে পাঠকের কাছে নতুনভাবে আকর্ষণীয় ও থ্রিলিং অনুভূতি সঞ্চারিত হবে, এটা সত্যিই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে একজন থ্রিলার লেখকের কাছে। আবার সংবাদের ভেতরে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে থ্রিলিং এলিমেন্ট সংযোজনের চেষ্টা আমাকে একজন সাংবাদিক হিসেবে লজ্জা দেয়।’ তিনি আরও জানান, সীমান্ত চোরাচালান বা উত্তরবঙ্গ সমস্যাকেন্দ্রিক থ্রিলার লিখতে গিয়ে পড়াশোনা যেমন করতে হয়েছে তেমনি ফিল্ডওয়ার্ক করতে হয়েছে।
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট রাজীব সরকার সারাজীবন লড়াই করেছেন কলকাতা ও সন্নিহিত অঞ্চলের বার ও বার ড্যান্সিংয়ের আড়ালে সংগঠিত অপরাধমূলক কাজকর্ম, বিশেষ করে নারীপাচার ও মাদকপাচারের বিরুদ্ধে। অথচ ক্ষমতাসীন সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর রোষাণলে তাঁকে জেলবন্দি থাকতে হয় দীর্ঘসময় নারীপাচারের অভিযোগে। তিনি নেতাজি সুভাষ-রহস্য নিয়েও আদালতে মামলা করেন। রাজীব সরকার বলেন, ‘আমার জেল ঠিক কেন হয়েছিল, আজও তা সঠিক জানি না। নারীপাচার চক্রীরা নাকি নেতাজি সুভাষের মামলায় জড়িত বড়ো বড়ো পদাধিকারীরা আমাকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল, এটাই সঠিক বুঝতে পারি না। এমনকি জেলে থাকার সময়েও প্রথমদিকে আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। তখন জেলবন্দি মাওবাদী নেতা তেলেগু দীপকের সাহায্য ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব ছিল। তেলেগু দীপক ও তাঁর সহযোগীরা আমাকে জেলের ভেতরে বিভিন্ন আক্রমণ থেকে বাঁচায়।’ রিজওয়ানুর হত্যার সমাধান কেন হলো না? প্রকৃত খুনীকে কি আড়াল করা হয়েছে? এমনকি ধনঞ্জয়ের ফাঁসিও কি সঠিক ছিল নাকি তাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছিল? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
দিনের দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ছিল ‘সোশ্যাল মিডিয়া, পাঠকের চাহিদা এবং বাংলা থ্রিলার’। আলোচনায় ছিলেন, সায়ন সরকার, শৌভিক মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ সৌরভ কর, অপূর্ব দে ও শুভম দাস। এই পর্বের আলোচকগণ ছিলেন মূলত পাঠক। এই পর্বটি ছিল মূলত পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে থ্রিলারকে যথাযথভাবে জানার একটা প্রচেষ্টা। আলোচনায় সায়ন সরকার বলেন, ‘থ্রিলার যেহেতু খুবই পাঠকপ্রিয় একটি জনরা, ফলে এমন অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি কোনো লেখকের হয়তো অন্যান্য ধারার লেখালেখি খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু যখন তিনি থ্রিলার লিখলেন এবং জনপ্রিয় হলেন তখন তাঁর আগের অন্যধারার লেখাগুলো নিয়ে পাঠক আগ্রহী হয়ে উঠল।’
সোমনাথ সৌরভ কর বলেন, ‘গ্রন্থ আলোচনা বইয়ের প্রচার ও প্রসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। অথচ বাংলা সাহিত্যে গ্রন্থ আলোচকদের সম্মান নেই। এই বিষয়টা ভাবা খুব দরকার।’ অপূর্ব দে বলেন, ‘ট্রু স্টোরি লেখাও লেখকদের কাছে চ্যালেঞ্জ, কারণ শুধু সংবাদটুকু লিখলেই হবে না, তাতে পরিমিত কল্পনাও মেশাতে হবে।’ শুভম দাস বলেন, ‘আজকাল যথাযথ পড়াশোনা না করেই অনেকে লিখতে শুরু করে দিচ্ছেন। পাঠক কিন্তু এসব সহজেই বুঝতে পারেন।’
শৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সাইকোলজিকাল থ্রিলার হোক, ক্রাইম থ্রিলার হোক কিংবা ট্রু স্টোরি থ্রিলার, যেটাই হোক তা ভালো হোক, গবেষণা করে হোক, পাঠককে যাতে আকৃষ্ট করে রাখতে পারে তেমন হোক।’ পাঠকের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আলোচনাপর্বটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এই পর্বের সঞ্চালনা করেন শৌভিক মুখোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, অভিযান পাবলিশার্সের আয়োজনে এবং অক্ষয় সংলাপ, বিভা, অভিনব মন প্রকাশনা ও কলকাতা ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্ট চলবে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত। কলেজ স্কোয়ারের অভিযান বুক ক্যাফেতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বুক ইন্ডাস্ট্রির যেকোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD