পাঁচটি প্রশ্ন

আমি আমার ‍মনের আনন্দে লিখি : মেসবাহ য়াযাদ

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ৩:৫৯ অপরাহ্ণ | 634 বার

আমি আমার ‍মনের আনন্দে লিখি : মেসবাহ য়াযাদ

বইদেশ-এর একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি লেখক মেসবাহ য়াযাদ-এর


প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

দারুণ রকম ভালো। বিভিন্ন পত্রিকায়, ফেসবুকে আর ব্লগে আমার বেশকিছু লেখা ছিল। আমার পরিবার, শৈশব, পড়াশোনা, প্রেম, ভ্রমণ, বাবা-মা, মধ্যবিত্ত জীবন- এসব বিষয়ক। একদিন মনে হলো, লেখাগুলোকে মলাটবন্দি করতে পারলে ভালো হয়। সে ভাবনা থেকে ভাষাচিত্রের খন্দকার সোহেলকে জানাই। উনি লেখাগুলো পাঠিয়ে দিতে বলেন। আমি সব লেখা সংগ্রহ করে, তার সাথে কিছুলেখা সংযোজন, বিয়োজন করে ভাষাচিত্রে পাঠিয়ে দিই। তারপর ২০১৮ সালের বইমেলায় আমার সেসব ‌’স্মৃতির খোরোখাতা’ বই আকারে প্রকাশিত হয়। যার নাম রাখা হয়- ‘পোস্টমর্টেম’।

 

লেখালেখির ইচ্ছেটা কেন হলো?

ইচ্ছেটা ছোটবেলা থেকে মাথায় কিট কিট করত। আমি তখন আট-নয় ক্লাসে পড়ি। বড় ভাইয়া সেসময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেদারসে লিখতেন। তার দেখাদেখি নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখবার বড় খায়েশ হয়। একদিন পাঠিয়ে দিই দৈনিক ইত্তেফাকে। চিঠিপত্র কলামে জীবনের প্রথম লেখা ছাপা হয়। তারপর পূর্বানী, চিত্রালী, ছায়াছন্দ, বিচিত্রা, আনন্দ বিচিত্রা, যায়যায়দিন, মৌচাকে ঢিল, বেগম, বিচিন্তা, ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন কাগজে দু’হাতে লিখতে থাকি। লেখার নেশা সেই যে মাথায় ঢুকেছে, ছাইপাশ লেখার সে নেশা এখনও মগজে রয়ে গেছে।

 

লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

মজার দুটো অভিজ্ঞতা আছে। দুটোই আমার দুছেলেকে নিয়ে। ২০১৮ সালে আমার প্রথম পুস্তক বের হয়- ‘পোস্টমর্টেম’ নামে। ২০১৯ সালে আমার বড়ছেলে রোদ্দুর আপন টাকায় সে পুস্তক কিনে তার বান্ধবীকে গিফট করেছে। সে পুস্তকে পুত্র তার বাপের কাছ থেকে বান্ধবীর জন্য অটোগ্রাফও নিয়েছে!

২০২০ সালের বইমেলায় বেরিয়েছে আমার দ্বিতীয় পুস্তক ‘সরল স্বীকারোক্তি’। কোনো এক ছুটিরদিনে মেলায় বউ আর ছেলেদের নিয়ে গিয়েছিলাম। ছোটছেলে সমুদ্দুর ভাষাচিত্র স্টলে বসে বাবার বইটা পড়ছিল। ভূমিকা পড়তে গিয়ে তার চোখে প্রথম বিরাট একটা ভুল ধরা পড়ে। যা আমাদের সবার চোখ এড়িয়ে গেছে। সে ভুলটা ছিল- আমার প্রথম পুস্তক প্রকাশ পেয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু আমি ভুলে ভূমিকাতে লিখেছি- ১৯১৮ সালে!

 

বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।

এসব নিয়ে ভাবি না সেভাবে। আসলে ভাবার জন্য যেসব গুণাবলী বা যোগ্যতা থাকার দরকার, সেটা আমার যে নেই- তা আমি ভালো ভাবেই জানি। আমি আমার মনের আনন্দে লেখি। আমার লেখা পড়ে কেউ কিছু শিখবে, জানবে- এমন ভাবনা আমার নেই। মূলত পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্খীরাই আমার লেখা পড়ে।

আজকাল বইমেলাকে কেন্দ্র করে ভালো, মাঝামাঝি আর নিম্নমানের প্রচুর বই প্রকাশিত হচ্ছে। শয়ে শয়ে তরুণ লেখকরা লিখছেন। এদের মধ্যে অনেকে ঝরে যাবেন। অনেকে টিকে যাবেন। লেখালেখির প্রচণ্ড নেশা, প্রচুর পড়ার অভ্যাস যাদের নিয়মিত থাকবে- তারাই টিকে যাবেন। পাঠক এখন অনেক বেশি সচেতন। দেখে-শুনে তারপর পছন্দের বই কিনছেন। সোস্যাল মিডিয়া আর মূল মিডিয়ার বদৌলতে ভালো আর রুচিসম্মত বই সম্পর্কে জানতে পারছেন পাঠক।

সৃজনশীল বই বেশি বেশি প্রকাশের জন্য আমার মনে হয়, লেখক আর প্রকাশকদের আরো নিবিড় যোগাযোগ আর মতবিনিময় হওয়া দরকার। আমাদের দেশের লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মধ্যে তেমন সুদৃঢ় সেতুবন্ধন আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা খুব জরুরি। পাশাপাশি কেবল বইমেলার ওপর নির্ভর না করে সারাদেশে বছরব্যাপি বইমেলার আয়োজন করা খুব দরকার। যেভাবে বই প্রকাশিত হচ্ছে, ঠিক সেভাবে বিপণন হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। প্রকাশনা শিল্পকে খুব ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে হবে। প্রকাশক বাঁচলে তবেই বেশি বেশি করে সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশিত হবে।

 

লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?

সেভাবে স্বপ্ন দেখি না। তবে, প্রতিবছর অন্তত একটি করে প্রকাশনার জন্ম দিতে চাই। সেটা ফিকশন, নন ফিকশন, ভ্রমণ গল্প, এলেবেলে গদ্য যাই হোক। মোট কথা লেখাটা নিয়মিত চালিয়ে যেতে চাই। সিরিয়াসধর্মী কোনো লেখা লেখবার চিন্তা করি না আমি। কারণ, সেটা আসলে আমার দ্বারা হবে না! আমি আমার মতো করে, সাদামাটাভাবে, মনের আনন্দে কিছু গদ্য লিখে যেতে চাই। খুব সহজে যেন পাঠক আমার লেখা পড়তে পারে, বুঝতে পারে। অনর্থক জটিল, কঠিন শব্দের সমন্বয় করে গদ্য লেখা আমাকে দিয়ে হবে না। সেটা আসলে আমার পছন্দও না।

 


[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD