বইদেশ-এর নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই ও প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি কলকাতায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত থ্রিলার লিট ফেস্টের অন্যতম আয়োজক মারুফ হোসেন-এর
থ্রিলার ফেস্ট বইপ্রেমী পাঠকের মধ্যে কেমন সাড়া ফেলেছে বলে মনে করছেন?
প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্ট, পাঠক এবং লেখকের মধ্যে খুবই ভালো সাড়া ফেলেছে। মাত্র তিনদিনের পরিকল্পনায় ৮ দিনব্যপী শতাধিক আলোচকের ২২টি বিষয়ের সেশন। ভয় ছিল, পাঠকদের কাছে খবর পৌঁছে দিতে পারব কি না, কিন্তু প্রথম কয়েকদিনের পাঠক রেসপন্স আমাদের আশান্বিত করেছে। আশা করি বাংলা ভাষার প্রথম থ্রিলার লিট ফেস্টের শেষ কয়েকদিন আরও জমজমাট হবে।
ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
অভিযান পাবলিশার্স গত তিন বছর ধরে বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তম থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে থ্রিলার সপ্তাহ ঘোষণা করে। পাঠকদের এই সময় থ্রিলার বইগুলোতে একটু বেশি ছাড় দেওয়া হয়। এবার হঠাৎ করে আমাদের মনে হলো যদি এই সময় বিভিন্ন থ্রিলার লেখক, আলোচক, পাঠক, প্রকাশকদের নিয়ে একটা সেমিনার করা যায়। যখন মাথায় এই ভাবনাটা এলো তখন থ্রিলার সপ্তাহ শুরু হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। আমরা চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিলাম। সবাইকে ফোন করতে শুরু করলাম। প্রথমে আমরাও ভাবিনি এটা ১০০ জন পেরিয়ে যাবে। খুব বেশি হলে ৩০-৪০ জন আলোচক হবে এরকম একটা ভাবনা নিয়ে কাজটা শুরু হয়েছিল। কিন্তু থ্রিলারের বিভিন্ন দিক আলোচনায় ধরতে গিয়ে এটা ১০০ জন হয়ে গেল। যদিও বাদ থেকে গেল আরও বিরাট একটা অংশ। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেক থ্রিলার লেখক তাদের পূর্বনির্ধারিত শিডিউল থাকায় আসতে পারবেন না, এটাও আমাদের অপূর্ণতা। এত কম সময়ের মধ্যে শুরু করায় বাংলা থ্রিলারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমি বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউ আসতে পারছেন না এটাও বেদনার। তবে এত অপূর্ণতার মধ্যেও অধ্যাপক থেকে বড়ো পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের ভুল বা অন্যায় মামলায় জেলখানা ব্যক্তি থেকে সাধারণ পাঠক, লেখক থেকে প্রকাশক, চলচ্চিত্রকার থেকে সাংবাদিক সকল শ্রেণির মানুষকে রাখা হয়েছে থ্রিলার বিষয়ে তাদের ভাবনা বলার জন্য। এই বৈচিত্র্যই প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
এই ধরনের উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে থ্রিলার বইয়ের পাঠক বৃদ্ধিতে বা বই বিক্রিতে কেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?
এই আয়োজন যদি নিয়মিত হয় তাহলে অবশ্যই থ্রিলারের পাঠক বৃদ্ধি হবে। লেখকেরাও সমৃদ্ধ হবেন। প্রকাশকেরা লাভবান হবে। এমনকি আলোচকেরাও বাধ্য হবেন থ্রিলার লেখকদের যোগ্য সম্মান দিতে। থ্রিলারকে সাহিত্যের মূলধারা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অজ্ঞানতাপ্রসূত ভাবনা অনেকটাই কমবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
উৎসব আয়োজনে কাদের সহযোগিতা পেয়েছেন? এ ধরনের আয়োজনে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাই।
প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিফটেস্ট আয়োজনে অবশ্যই যারা আলোচক তাঁদের সহায়তা পেয়েছি। যেহেতু মাত্র তিন দিনের পরিকল্পনা, ফলে সবাইকেই আমন্ত্রণ করা হয়েছে কম সময়ের মধ্যে। অনেকেই অন্য কাজ বাদ রেখে থ্রিলার লিট ফেস্টকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে আসছেন। আমরা কৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে। এছাড়া অক্ষর সংলাপ প্রকাশন, বিভা প্রকাশনা এবং অভিনব মন প্রকাশনা আয়োজনে সহযোগিতা করেছে। কলকাতা ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটিও সাহায্য করেছে। এর বাইরে অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য আমরা এবারের উৎসবে পাইনি। কারণ আমরা সেটা অ্যাপ্রোচ করার সময় পাইনি। অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য পেলে অবশ্যই ভালো। তাতে যাঁরা আলোচক তাদের জন্য আরও বিশেষ বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রাখা যায়। প্রচারেও নজর দেওয়া যায় আলাদা করে। দ্বিতীয় বছর থেকে আমরা অবশ্যই এগুলো নিয়ে ভাবব।
উৎসব নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্ট নিয়ে সত্যি বলতে আমরা বিরাট একটা পরিকল্পনা করেছি। আমরা ঠিক যেভাবে ভেবেছিলাম এই অনুষ্ঠানটা সময়ের অভাবে পুরোপুরি সেটা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় বছর থেকে আরও অনেক বড়ো করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্য ভাষায় যাঁরা থ্রিলার লিখছেন বা থ্রিলার নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁদেরকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হবে। থ্রিলার নিয়ে এই উৎসবকে প্রকৃত আন্তর্জাতিক একটা আলোচনা উৎসবে পরিণত করার ইচ্ছে আছে আমাদের। আপনারা সবাই যদি পাশে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমরা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করব।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD