বইদেশ-এর একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি জনপ্রিয় কবি মুজিব ইরম-এর
প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
আমার প্রথম প্রকাশিত বই ‘মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান’। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। বাংলা একাডেমি থেকে। আমার লেখক জীবনে প্রথম বই প্রকাশের ঘটনা একাধারে আনন্দময় ও উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। বইটি প্রকাশের সঙ্গে নানাভাবে সরাসরি জড়িত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য চারজন মানুষ, চারজন প্রিয় সাহিত্যিক। কবি রফিক আজাদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ওঁরা চারজনই আমার অতি প্রিয়জন, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ। বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন আরেকজন প্রিয় শিল্পী শ্রদ্ধেয় কাইয়ুম চৌধুরী। বইটি প্রকাশের পর পর পেয়েছিল বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক পুরস্কার ১৯৯৬। এতসব ঘটনা আমার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতাকে আনন্দময় ও উল্লেখযোগ্য করে তুলেছিল। তাছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে যে আমার প্রথম বইটি প্রকাশিত হতে পারে, লেখালেখির শুরুতে তা ভাবতেই পারিনি। তাও কবিতার বই। বাংলা একাডেমি তো গল্প উপন্যাস কবিতার বই এভাবে প্রকাশ করে না, মূলত প্রকাশ করে রচনাবলী, গবেষণা ও প্রবন্ধের বই। তাছাড়া আমরা তো ছিলাম লিটল ম্যাগাজিনের লোক। কবিতাগুলো আমাদের লিটল ম্যাগাজিনগুলোতেই প্রকাশিত হয়েছিল ৯০ থেকে ৯৬ কাল পর্বে। হঠাৎই সে বিরল সুযোগ করে দেয় বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প। আমরা ছয় মাসের জন্য ফেলোশিপ পেয়েছিলাম। নিজের কবিতাগুলো লিটল ম্যাগ থেকে বাছাই করে নিজ হাতে কম্পোজ করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলাম। সেই ছয় মাসের জন্য নিয়মিত টাকা-পয়সাও পেয়েছিলাম। পেয়েছিলাম বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে আড্ডার বিরল সুযোগ। সব মিলিয়ে এক আনন্দস্মৃতি তৈরি হয়েছিল, যা নিয়ে লিখতে গেলে এই অল্প পরিসরে সম্ভব নয়। একদিন হয়তো বিস্তারিত লিখবো। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
লেখালেখির ইচ্ছেটা কেন হলো?
তা তো ঠিক জানি না। কেন যে হলো— ভাবতে গেলে নিজেই অবাক হই। আমার বংশে, লতায়পাতায় তো দূরের কথা, জানাশোনা আশেপাশে কোনো লেখক থাকা তো দূরের কথা, পাঠকই ছিল না। আর পাঠ্য বইয়ের বাইরে যা আউট বই, তা ছিল নিষিদ্ধ আমাদের জন্য। সবাই চাইতো পাঠ্য বই পড়ে যেন ভালো ভালো পাশ দিই, নাম করি। নাম করেছিলাম বটে। তবে গোপনে গোপনে আউট বই পড়ে পড়ে কেন যে নিষিদ্ধ কাজটি শুরু করেছিলাম, আজ আর কোনো কারণ বের করতে পারি না। কোনো দিন পারবো বলেও মনে হয় না।
লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
তেমন কিছু মনে পড়ছে না, তবে সেই লেখালেখির শুরুর দিকে বইমেলায় পরিচিত অর্ধ পরিচিত প্রকাশকদের সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন অমুকের মতো উপন্যাস লেখেন, তমুকের মতো সায়েন্স ফিকশন লেখেন, বের করে দিই। এই সব কবিতা লিখে কী হবে, কে পড়বে, কে প্রকাশ করবে! বাজার নাই। খুব মজাই পেতাম সে-সময় এসব কথাবার্তা শুনে। এখনও কি তরুণ কবিদের এসব শুনতে হয়? জানি না।
বাংলাদেশের সৃজনশীল লেখালেখির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
বাংলাদেশের সৃজনশীল লেখালেখির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কয়েক লাইনে বলে দেওয়াটা অন্যায় বলে মনে করি। ভালো কাজ হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। অতীতেও হয়েছে। আমরা তুলনায় বিশ্বাস করি, তাই বলতে হয় বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো। অবশ্যই ভালো। তবে দুঃখজনক কথা হচ্ছে, লেখা ও বই প্রকাশের সহজ ও অবাধ সুযোগ প্রকৃত কাজকে ঢেকে ফেলছে। পাঠকের চেয়ে লেখক বেশি। বইয়ের চেয়ে আবর্জনা বেশি। একটা হযবরল অবস্থা। কবিতার অবস্থা তো আরও খারাপ। সবাই এখন কবি হতে চায়। লেখক হতে চায়। কোনো পেশায় কেউ আর সন্তুষ্ট নয়। সব কিছু হয়েছে, এবার লেখক হয়ে যাই, কবি হয়ে যাই। পৃথিবীর কোথাও আর এমন দেখি না। লেখকের চেয়ে লেখকের সামাজিক অবস্থান প্রধান হয়ে উঠছে। চট করে এসব কথাই মনে হলো আজ।
লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?
তেমন কোনো স্বপ্ন নাই। শুধু যেন লিখে যেতে পারি নিজের জন্য। কবিতা। আর কিছু নয়। এটুকুই ভাবি আজকাল।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD