দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি কবি পরাগ রিছিল–এর
প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। বইটার নাম “ঊমাচরণ কম্মর্কার”, প্রকাশিত হয়েছিল ঐতিহ্য থেকে। ঐতিহ্য প্রকাশনী প্রতিবছর তরুণদের সৃজনশীল পাণ্ডুলিপি বেছে বেছে বই করে, এখনো সে ধারা অব্যাহত আছে। পাণ্ডুলিপি মোটামুটি প্রস্তুত ছিল ২০০৯ সালে। আলাপে-আলাপে, কানে-কানে পৌঁছে যায় সে বছর কাদের কাদের বই বের হচ্ছে। বেছে বেছে চার/পাঁচটা বই। গুণে দেখলাম, চার-পাঁচজনের নাম তো পেয়ে যাচ্ছি! পাণ্ডুলিপি জমা দেয়ার ইচ্ছায় ক্ষান্তি দিলাম। পরের বছরের জন্য প্রস্তুতি। পরের বছর জমা দিলাম। চুপচাপ আছি। কবি বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেই- এ বছর আসতে পারে। এক প্রিয়ভাজন কবি জিজ্ঞেস করলে আমতা আমতা করে বললাম, পাণ্ডুলিপি জমা দেয়া আছে। কোথায়? আরে কোথায় বলেন না? বললে সমস্যা কি? – বাধ্য হয়ে নিচু স্বরে বলে দিলাম। “ধুর মিয়া, এইটা বলবেন না।” এই মুহূর্তে শ্রদ্ধাভাজন-প্রিয়ভাজন তিনজনের নাম মনে পড়ছে। তারা কেউ কোনোদিন কোনোকিছু বলেন নি তবে খুব দৃঢ়ভাবে অনুমান করি, তারা নিশ্চয়ই আমার লেখার পক্ষে ভালো মতামত দিয়েছিলেন। ততদিনে লিটলম্যাগে লিখে কিছুটা পরিচিতি পেলেও বই প্রকাশিত হবেই সেই পরিচিতিটুকু কিংবা দৃঢ় আত্মবিশ্বাসটা ছিল না। প্রকাশ্যে নামগুলো লিখছি না কারণ আরো অনেক বড় বড় কাজের জন্য তাদের গুণমুগ্ধ আমি, আমার নাম নেয়া-না নেয়ায় তাদের কিছু যায়-আসবে না। সরাসরি তাদের বলব, আজীবন কৃতজ্ঞ তো আমি। পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে দোলাচলে ছিলাম।
হঠাৎ একদিন আমার মোবাইল নম্বরে ফোন আসে, এ বছর আপনার পাণ্ডুলিপিটা নির্বাচিত হয়েছে। পরের ধাপে একটি শব্দের সংশোধন, কোনো একটি বানান পরিবর্তনের আগেও ফোনকল আসে। ফাইনাল প্রুফ দেখে দেবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রকাশনীর এই প্রফেশনালিজমে মুগ্ধ হই। আজো গর্ব অনুভব করি যে, প্রথম বইটা ঐতিহ্য থেকে বের হয়েছিল।
লেখালেখির ইচ্ছেটা কেন হলো?
কৈশোর পেরিয়ে প্রথম যৌবনে পদার্পণের সময়, জীবনের একটা ক্রান্তিলগ্নে এতটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলাম যে, এছাড়া আর বোধহয় কোনো উপায়ই ছিল না। নিজের ভাবনাগুলির সাথে কথা বলা-সময় কাটানো, লেখা ছাড়া।
পরবর্তীতেও অনেক বছর, অনেক সময়, খুব নিঃসঙ্গ নিজের দুঃখ কষ্টগুলির সাথে একাকী কাটাতে হয়েছে। সেসব পরিস্থিতিগুলোই বোধহয় লেখালেখির দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেখিয়েছে মুক্তির একটা পথ। তাছাড়া বাড়িতে নিয়মিত বিভিন্ন সাময়িকী, পত্রপত্রিকা আসতো, সেগুলো নিয়মিত পড়তাম, পড়ে লেখার ইচ্ছে তো একটু-আধটু জাগতই!
লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
বাবা প্রায়শই চিন্তিত হয়ে পড়তেন, বাড়ির বড় ছেলে, চাকরির দিকে মনোযোগ নেই লেখালেখির দিকে ঝোঁক। মাকে বলতেন, ওরে জিজ্ঞেস করে দেখো তো, ও লেখালেখি করে টাকা পায় কিনা? একদিন ঘরের বারান্দার টেবিলে তিনটি বই রেখে বাইরে গিয়েছি, ফিরে এসে দেখি একটি বই আর নেই। জিজ্ঞেস করছি, একটি বই কোথায় গেল? মা বললেন, একটি বই তোমার বাবা তার বন্ধুকে দিয়ে দিয়েছে। আমাদের বাড়িতে এসেছিল।
পরে বাবাও তার বেকার ছেলেকে ডিফেন্স করে আমার হয়ে আগবাড়িয়ে কয়েকজনকে উত্তর দিয়েছে, আমার ছেলে তো লেখালেখি করে, বই লেখে। পরের দিকে হয়তোবা কিছুটা গর্বও অনুভব করতো যখন বুঝতে পেরেছিল ছেলেটা সহজে এই লাইন ছেড়ে আর অন্য লাইনে যাচ্ছে না। ডিসেম্বরে আমাদের এলাকায় অনেক ম্যাগাজিন বের হয় আর ফেব্রুয়ারি আসলে মা-বাবা দু’জনই জিজ্ঞেস করতেন, এ বছর তোমার কোন নতুন বই বের হয় নাই?
বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ আস্থাশীল। সৃজনশীল লেখালেখি অন্ধকার সময়ে আলোর রেখা দেখাবে।
লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?
জীবনে মনের মতো যদি অন্তত পাঁচটি বই লিখে যেতে পারতাম!
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD