দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি কবি ও কলামিস্ট– ফকির ইলিয়াস-এর
প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
মূলত বাউল গান দিয়েই আমার প্রকাশনার শুরু। কবিতা লিখতাম। সেগুলো ছিল চতুর্দশপদী। সনেট হতো কী না- জানতাম না! গান আমার রক্তমজ্জায় খেলা করত। তাই গান লেখার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি।
‘বাউলের আর্তনাদ’ আমার লেখা প্রথম বই। গানের বই। মরমী ধারার আধ্যাত্মিক গান। বইটি প্রকাশিত হয় সিলেট থেকে ১৯৮৫ সালে। ‘মোসাফির প্রকাশনী’ ছিল স্থানীয় একটি প্রকাশনা সংস্থা। কয়েকজন তরুণ মিলে করেছিলেন। বইটি বের হওয়ার পর, ‘বাহির হইয়াছে’ শিরোনামে একটা বিজ্ঞাপন যায় স্থানীয় ‘সাপ্তাহিক যুগভেরী’ পত্রিকায়। তা সুধীজনের বেশ নজরে পড়ে। আমি তখন সদ্য কলেজ পাশ করে বের হওয়া তরুণ। মাথায় ঝাকড়া চুল।সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন চোখে-মুখে।
স্থানীয় অনেক বাউল শিল্পী বইটির প্রশংসা করেন।বইটি নেড়েচেড়ে দেখেন অনেক নামী গীতিকারও। আমি অনেক আশা খুঁজে পাই!আমিও গানে গানে আমার আরাধনা করতে পেরেছি। কিছু বলতে পেরেছি। এই স্বপ্ন ও সাহস আমাকে বেশ উদ্যমি করে তোলে।
লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো?
লেখা মানে প্রকাশ করা। নিজের কররেখা রেখে যাওয়া। স্বয়ং স্রষ্টাই নিজেকে জাহির করার জন্য আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন। আমার মাঝে সেই ভাবনাই কাজ করত। আমি কিছু বলতে চাই। আমার কিছু বলার আছে। এই বলতে গিয়েই লেখালেখির শুরু। আর সেই শুরু যদি হয় পয়ার-ছন্দে, তাহলে তো বুঝাই যায়- একেবারে প্রান্তিক স্তর থেকে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি কৈশোর থেকে প্রস্তুতি নিয়েই, একদশকের বেশি সময় লাগাতর ‘আউট বই’ পড়তে পড়তেই লেখা শুরু করেছিলাম।
লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
চমক লাগা অভিজ্ঞতা অনেক। ইংল্যান্ডে গিয়েছি। একটি সাহিত্য অনুষ্ঠানে অতিথি আমি। হঠাৎ একজন অপরিচিত
তরুণ একটি খাতা এনে আমাকে দিয়ে বললেন, অটোগ্রাফ চাই! আমি তো খাতা খুলে অবাক! বিলেতের বাংলা সাপ্তাহিক কিংবা অন্যান্য সাহিত্য সাময়িকীতে আমার প্রকাশিত কবিতাগুলো ওই খাতায় কেটে পেস্ট করা! যেন একটি বই!
আনন্দে আপ্লুত হই! অটোগ্রাফ দিয়ে তার হাতে দিলাম। তিনি মহাখুশি। কৃতজ্ঞ আমিও। একজন পাঠক যে কবিতা এতো ভালোবাসতে পারেন- এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি! একজন কবিরই বা এরচেয়ে বড় সম্মান আর কি হতে পারে!
বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
বাংলাদেশে এই সময়ে অনেক সৃজনশীল লেখক লিখছেন। কথাসাহিত্যে অনেকেই ভালো করছেন। কবিতায় নতুন ডাইনমেনশন নিয়ে এগোচ্ছেন অনেকেই। এটা খুবই ভালো লক্ষণ। বাংলা কবিতা বিশ্ব কবিতার সাথে পাল্লা দিয়েই নতুন উপাত্তে সমৃদ্ধ হচ্ছে। যে বিষয়টি বলতে চাই- তা হলো, আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের প্ল্যাটফর্মে এখনও অনেক প্লট আনটাচড থেকে গেছে। তা নিয়ে আরও অনেক বড় ক্যানভাসের সাহিত্য নির্মাণ সম্ভব। এই কাজটিতে তরুণরা এগিয়ে আসবেন বলে আমি আশাবাদী।
লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?
আমি পরিকল্পনা করে কাজ করিনি। করতে অভ্যস্ত নই। কিন্তু চলমান সময় ও বিশ্ব পরিস্থিতি ভাবনায় ঢেউ ধরাচ্ছে! আমার ‘কবিতাসংগ্রহ-১’ বইটির কাজ চলছে বড় আকারেই। চলতি সালে একটি প্রবন্ধের বই আসতে পারে। সমকালীন সাহিত্য বিষয়ক।
এছাড়া আমার লেখা সহস্রাধিক বাউল গান আছে। এর একটা বড় সংকলন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। এছাড়া সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখিতো আছেই।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD