পাঁচটি প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধকে লেখার উপাদান হিসেবে নিতে চাই

বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১:৫৩ অপরাহ্ণ | 827 বার

মুক্তিযুদ্ধকে লেখার উপাদান হিসেবে নিতে চাই

বইদেশ-এর একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি নবাগত কবি ও ছোটকাগজ কর্মী – যাহিদ সুবহান-এর


 

প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

আমার প্রথম বই ছিল উপন্যাস, দু-ফর্মার। বেরিয়েছিল ২০০৮ সালে ঢাকার একটি প্রকাশনা সংস্থা
থেকে। তখন আমি সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছি। লেখালেখি করতাম আরো কয়েক বছর
আগে থেকে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে শুরু। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতির চেয়ে ইতিহাসটা
বলতে চাই। এক অগ্রজের প্রেরণায় জীবন ঘনিষ্ট এক ঘটনা নিয়ে সাজালাম ‘গোলাপ ঝরা স্মৃতি’
পানণ্ডুলিপি।

অল্প বয়সে এই বিষয়টি দুঃসাহসিক বিষয় মনে হতো নিজের কাছে। মনে হতো হিমালয়
জয় করে ফেলেছি। কী যে তাড়না নিয়ে ঢাকায় যেতাম সে সময়! ঢাকায় তখন বলতে গেলে নতুন মানুষ।
পাবনা থেকে লোকাল ট্রেনে ঢাকায় যেতাম। বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের স্টেশনে রাত তিনটায়
যাত্রা করতাম। ভোরে উঠে সারাাদিন ধরে যেতাম। সন্ধ্যায় পৌঁছতাম। রাতে বাংলাবাজার সংলগ্ন কবি
শামসুর রাহমানের স্মৃতিবিজড়িত বিউটি বোর্ডিংয়ে রাতযাপন করে পরদিন আবার পাবনার
উদ্দেশ্যে যাত্রা করতাম। দুদিন কেটে যেত। ঢাকায় অন্য কোনো কাজ থাকত না। শুধু প্রথম বইটি
হাতে পাবার তাড়না। পরে আর কোনো একক গ্রন্থ প্রকাশ হয় নি। ২০২০ সালে মারমেইড প্রকাশনী
থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শুধু হাঁটছি’।

 

লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো?

গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছি। জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর কেটেছে গ্রামে। প্রাথমিকের সময়
থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছড়া, কবিতা পাঠ করতাম। বিতর্ক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করতাম।
পরিবারে বাউল প্রীতি সাহিত্য-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকতে প্রেরণা দেয়। মাধ্যমিকের সময় দুয়েক
কলম ছড়া লিখতাম। বই পড়তাম খুব। ভালো-মন্দ কোনো বাদ বিচার না করেই। জীবনের
কিশোরবেলার প্রেম-সম্পর্ক-ভালোলাগা-প্রেমিকার কাছে চিঠি লেখা ইত্যাদি অনুসঙ্গ এর সাথে
যোগ দিয়েছিল। এভাবেই শুরু এবং চলছে।

 

লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

তিক্ততা আর ভালোলাগা দুয়ের মিশেলে অনেক ঘটনাই আছে। উল্লেখ করার মতো একটি ঘটনা বলি। ২০০৫
সালে আমার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষককে নিয়ে লেখা একটি কবিতার জন্য আমার প্রাথমিকের এক
মাতৃসম শিক্ষক আমাকে একশত টাকা উপহার দিয়েছিলেন। এরপর দেড় দশকে অনেক উপহার পেয়েছি
কিন্তু ঐ একশত টাকা আমার লেখালেখি জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার এবং অনুপ্রেরণা।

 

বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।

বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখি নিয়ে আমাদের বিশেষ হতাশা আছে। রবীন্দ্রত্তোর দশকগুলোতে অনেক
সাহিত্য আন্দোলন-রচনা বিশেষ স্থান দখল করেছে। ইদানিং বিশ্বায়নের কু-ফল লেখালেখির জগতেও ছাপ
ফেলেছে বলে মনে করি। তাই বিগত দশকগুলোতে বিশেষ করে গত দুই দশক সৃজনশীল সাহিত্য অনেকটা
মুখ থুবড়ে পরার জোঁ। পাঠকের পাঠবিমুখতা, লেখক পাঠকের মনোজগতের দূরত্ব বা ব্যবধান ইত্যাদি
খবর ইদানিং শোনা যায়। তবে আমাদের এই হতাশাকে নিবারণ করার মতো খবর হচ্ছে এই সময়ে
আমাদের অর্জনও নেহায়েৎ কম নয়। তাই ভবিষ্যৎ আলোকিত বলেই মনে করি।

 

লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?

সাহিত্য যাপন করি। সময়কে ধারণ করা জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে আমার কলমের আঁচড়ে। আমি
প্রতিনিয়ত জীবনের প্রতিচ্ছবি এঁকে যাই। যাহিদ সুবহানের ভেতরে বাস করে আরেক যাহিদ
সুবহান।

ভেতরের সে প্রতিদিনের জীবনের হিসেব রাখে। এই হিসেবের উল্লেখযোগ্য সে পাঠ করে
শোনায়। সেই পাঠ শোনার পর আমি তাড়িত হই। কিছু অংশ লিখে রাখি নিজের মতো; কবিতা হয়ে
যায়। নিজের জন্যে লিখি সেগুলো অন্যের (পাঠকের) হয়ে যায়। যেহেতু সেগুলো অন্যের হয়ে যায় এবং
যখন অন্যেরা আমার লেখা তাদের মনে করে তখন নিজেকে স্বার্থক মনে হয়; কিছুটা হলেও! তাই লিখে
যেতে চাই জীবনের শেষ পর্যন্তও। মহান মুক্তিযুদ্ধকে লেখার উপাদান হিসেবে নিতে চাই।

একযুগ ধরে সপ্তর্ষি নামে একটি ছোটকাগজ করি। ছোটকাগজ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ
করি। কবিতা-সম্পাদনার পাশাপশি ছোটগল্প নিয়ে কাজ করতে চাই।

 


[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD