ফেসবুক থেকে

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও বাস্তবতা

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ | ১১:৩৪ অপরাহ্ণ | 373 বার

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও বাস্তবতা

মাহফুজ ফারুক


জার্মান পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির আয়োজনে ২০২১ সালের ৭৩তম বইমেলা করোনার কারণে এক বছর বিরতিতে এ বছর নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। আয়োজন ছিল সীমিত আকারে। অনুল্লেখ্য সংখ্যক প্রকাশক ও বিক্রেতার অংশগ্রহণ খোদ মেলা কর্তৃপক্ষকেই হতাশ করেছে।

 

বিশ্বখ্যাত এই বইমেলায় আশির দশক থেকেই বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বইমেলায় অংশগ্রহণ করছিল। ২০১৯ সাল থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মেলায় অংশগ্রহণের সরকারি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা মেলায় আসছেন। ভিসা জটিলতাও অনেক সময় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠছে।

 

এবারের মেলায় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছয় সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখানে কিছু বিষয়ের উল্লেখ লক্ষ্যণীয়।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। এই কাজটি মূলত পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের। পৃথিবীর আর কোনো দেশ রাষ্ট্রীয়ভারে মেলায় অংশগ্রহণ না করলেও মেলা এলেই বাংলাদেশের মন্ত্রী আমলাদের আনাগোনা ফ্রাঙ্কফুর্টে বেড়ে যায়। ঐতিহ্যগতভাবে মেলার বিশাল জমকালো “উদ্বোধন আয়োজন” কর্তৃপক্ষ করলেও, পরদিন অভিনব কায়দায় মন্ত্রীকে দিয়ে বাংলাদেশ স্টল আবার উদ্বোধন করানো হয়। পৃথিবীর আর কোনো দেশ থেকে মন্ত্রীও আসেন না। কোনো স্টলও উদ্বোধন করা হয় না। মেলা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য যেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন উর্ধতন কর্মকর্তাই যথেষ্ট, সেখানে মন্ত্রী মহোদয়কে বসিয়ে দেওয়া হয়। যা অত্যন্ত বিব্রতকর।

 

বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ব্যাপারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কিছু বই দিয়ে স্টল সাজিয়ে বসে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আর এটা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাজও নয়। বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলার সাথে এই বই মেলাকে মেলানো যাবে না। এখানে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা হয় না। আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষ সভা-সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। যেখানে বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন জার্নাল প্রকাশ করা হয়। এই মেলায় পাঠকদের কাছে বই বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। এই বইমেলা সম্পূর্ণ বেসরকারি। জার্মান পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির আয়োজন।

 

সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে এবং এর প্রচার-প্রসার ও বিনিময় করতে সরকারিভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে কাজ করতে পারে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে সংস্কৃতিবিষয়ক উইংস খুলে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের নিয়োগ দিয়ে কাজ করতে পারে। প্রচার-প্রচারণায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।

 


লেখক : সদস্য, জার্মান আওয়ামী লীগ ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, জার্মানি।

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD