রফিক কায়সার স্যারের সাথে প্রথম দেখা আমাদের মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাসের বাসায়। তখন আমি হয়ত ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। ফখরুজ্জামান স্যারের সাথে অচেনা একজন শিক্ষক এসেছেন। আব্বার সাথে বসে তাঁরা চা খাচ্ছেন। আমাদের বাসায় বসে পাশের বাসার কানাই কাকার মেয়ে লাকির সাথে কথা বলবেন। লাকি আমার এক বছরের বড়। লাকিকে ডেকে আনা হলো। ফখরুজ্জামান স্যার রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের একটা জায়গা খুলে লাকির হাতে দিয়ে শব্দ করে পড়তে বললেন। লাকি মাথা নিচু করে পড়তে লাগল – ‘আমি সুধা! … আমি এখানকার মালিনীর মেয়ে’ ইত্যাদি। ক্যাডেটরা ডাকঘর মঞ্চায়ন করবে। সুধা চরিত্রের জন্য লাকিকে নেয়া হলো।
এরপর আমিও ক্যাডেট কলেজে গেলাম। সেই সুবাদে ক্লাস সেভেনেই ছুঁতে পেরেছিলাম ‘শহীদ খুরশীদ স্মৃতি গ্রন্থাগার’ নামের বিশাল এক স্বপ্নকে। আব্বা মাঝে মধ্যে লাইব্রেরি থেকে বই আনতেন – রম্যানী বীক্ষ্য বা দেশে বিদেশে বা সমারসেট মমের গল্পসমগ্র। সেই লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন শিকদার স্যার। লাইব্রেরিটা সমৃদ্ধতর হতে শুরু করেছে সত্তরের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার শিক্ষক রফিক কায়সার স্যার যোগ দেয়ার পর থেকে। আমাদের প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যের শিক্ষক রফিক কায়সার স্যার তখন কমলপুরাণ বইটির জন্য বিখ্যাত। তাঁর আরেকটা খ্যাতি ছিল- হুমায়ূন আহমেদের ‘শংখনীল কারাগার’ বইয়ের নামটি ছিল রফিক কায়সার স্যারের সম্ভাব্য কবিতার শিরোনাম থেকে নেয়া।
ক্লাস নাইনে উঠে স্যারকে পেলাম। ব্যাকরণ পড়াতেন। আমি এসএসসির পর চলে এসেছিলাম বলে স্যারের সাহিত্যের ক্লাস পাইনি। আমার আফসোস, এ কারণে স্যারের বাক প্রতিভার চূড়ার শ্রোতা – দর্শক হওয়া থেকে আর সম্ভাব্য সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলাম। তবে তিনি ব্যাকরণ পড়িয়েছেন খুব সহজভাবে, কঠিন মনে হয়নি তাই। একবার ‘ ক্যাডেট কলেজে বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ নিয়ে পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে চিঠি লিখতে হল। স্যার যে কয়টা খাতা রিভিউ করলেন তাঁর মধ্যে আমার খাতাটিও ছিল। আগের সপ্তাহেই মোহসিন রিয়াজ স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে যেটুকু দুঃখ ছিল, এবারে তা ঘুচল। মোহসিন স্যারের ক্লাসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও আমার খাতাটা পড়ে শোনাতে বলেননি। যাহোক, পত্রিকার চিঠিতে আমি লিখেছিলাম, ‘ বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটি অনাহুত সমস্যা’। রফিক স্যার ভুল করে পড়েছিলেন, ‘ অনাদৃত সমস্যা’। আমি ভাবলাম, বাহ! এটাই তো যথাযথ শব্দ!
আব্বা চাকরি নিয়ে সৌদি আরব চলে যাবেন। রফিক স্যার বলে দিলেন সৌদি গাহুয়া ( চায়ের মতো পানীয়, কয়েকটি মশলা দিয়ে বানায়) নিয়ে আসতে। আব্বা কয়েক কেজি গাহুয়া নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকে রফিক স্যার আমাদের বাসায় গাহুয়ার রেফারেন্সে পরিচিত হলেন।
ক্লাস নাইনের একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানের জন্য স্যারের কাছে আমি দুটি কবিতা জমা দিয়েছিলাম। আগের দিন বিকেলের চায়ের সময় ( মানে, দুধ আর বিস্কুটের সময়) ডাইনিং হল প্রিফেক্ট কাজী আরিফ ভাই আমার ‘ বাংলাদেশ কেঁদে ওঠে’ কবিতাটি ফেরত দিয়ে বললেন, আমি যেন এই কবিতাটি পড়ি। কিন্তু সেই কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘ বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’ কবিতাটির নিরীহ প্রতিধ্বনি বললেও কম বলা হবে। বিবেকের দংশন হচ্ছিল। তাই সন্ধ্যাবেলায় আমি নতুন একটা কবিতা লিখে ফেললাম। কবিতাটি দুর্বল ছিল। কিন্তু সেদিন ডিউটি ক্যাডেট ছিলাম বলে সবলেই পাঠ করেছিলাম! শহীদ মিনারে একমাত্র আমিই ছিলাম খাকি পোশাকের কবি!
রফিক কায়সার স্যার ছুটিতে যাবার আগে ছেলেদেরকে সম্ভাব্য পাঠ্যতালিকা সুপারিশ করে দিতেন, এমনকি প্রত্যেকের বাড়ির কাছের পাঠাগারের ঠিকুজি আর সম্ভাব্য বইয়ের খবরও জানতেন! শরীফ এ নিয়ে এখনো বিস্ময় প্রকাশ করে। জি এইচ হাবীবের মনে পড়ে, স্যার তাকে বলেছিলেন, এসএসসি পরীক্ষার ছুটিতে পারলে বঙ্কিমের উপন্যাসগুলো পড়ে ফেলো। ঢাকা স্টেডিয়ামের অধুনাবিলুপ্ত আইডিয়াস- ম্যারিয়েটা থেকে হাবীব কিনে ফেলল মুক্তধারা প্রকাশিত চমৎকারদর্শন বঙ্কিম উপন্যাসসমগ্র; হার্ডবাইন্ড বই কিন্তু নিউজপ্রিন্ট। সে ছিল ভবিষ্যতের লেখকের জন্য এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা।
মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই স্যার আমার কোনো না কোনো লেখা পড়ে উৎসাহ দেবার জন্য ফোন করে আমাকে একগুচ্ছ বিহ্বলতা উপহার দিয়ে থাকেন। মুনীর যখন মেডিকেলে পড়ার সময় দিকচিহ্ন পত্রিকায় কলাম লিখত, তখন তিনি আগ্রহ উসকে দিয়েছেন – কখনো কথা বলে, কখনো লিখে; কিন্তু এই দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যকে মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি যে পেশাগত পড়াশোনাই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। সম্প্রতি স্যারের ‘আপনি তুমি রইলে দূরে’ বইটি পড়ে কৌতূহল বেড়ে যাচ্ছে। বইটি পড়ে বুঝলাম, ইতিহাসে কিছু অদৃশ্য মানব থাকেন। এঁদের একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবার খ্যাতি আর প্রতিভার নিচে চাপা পড়ে যাওয়া শান্তিনিকেতনের প্রথম দিকের ছাত্র, জেনেটিকসের শিক্ষক, বাবার কর্মসচিব, সেবক ও বিদেশ সফরসঙ্গী, কিছুদিনের জন্য পূর্ববঙ্গের জমিদারির ভার নেয়া, শান্তিনিকেতনের হাল ধরে কালক্রমে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হয়ে ওঠা ‘রথী’ একজন চিত্রকরও ছিলেন। রফিক কায়সার স্যারও যেনবা এক অদৃশ্য মানব। তিনি ধাত্রীর মমতায় গড়ে তুলেছেন শাহাদুজ্জামান, জি এইচ হাবীবসহ আরও কত লেখক ও কবিকে। যারা কবি-লেখক হয়নি, তাঁদেরকেও সাহিত্যমগ্ন করে তোলা, মননের পরিচর্যার কাজটিও রফিক স্যার এবং তাঁর প্রজন্মের শিক্ষকগণ করে গেছেন।
রফিক কায়সার স্যার ছাত্রদের মনোযোগ আদায় করে নিয়েছিলেন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বের কারণে। আমিনুলের এখনো স্পষ্ট মনে আছে, সমকালীন বাংলা সাহিত্য কিংবা বিভাগপূর্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি আর রাজনীতি নিয়ে তাঁর ছিল অগাধ জ্ঞান। আমাদের বন্দে আলী মিয়া কিংবা ডা. লুৎফর রহমানময় বাংলা সিলেবাস কিন্তু তাঁকে তাঁর কেতাবি তালিমদানে নিরুৎসাহিত করতে পারেনি; প্রতিটি টেক্সটের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বাংলা সাহিত্যই নয়, বিশ্বসাহিত্যও ঘুরে আসতেন। সাহিত্যে অনাগ্রহী ছাত্ররাও তাঁর ক্লাসে আগ্রহ পেত। সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে তাঁকে পাওয়া সৌভাগ্যজনক ঘটনা মেনে নিয়েও অনেক সময় তাঁর ভাববাচ্যে কথা বলাটাকে অনেকেই উন্নাসিকতা মনে করত; খায়ের বুঝতে পারত না স্যার যখন ‘প্রীত হলুম’ বলতেন, আদৌ তিনি তা প্রীতিবশত বলতেন কি না! এক ছাত্রের এক অব দ্য রেকর্ড পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ছাত্রদের কিশোরসুলভ দৌরাত্ম্য বা ‘চাইল্ডিস’ কার্যকলাপকে তিনি মেনে নিতে পারতেন না, কেননা তিনি ছাত্রদের কাছে প্রাপ্তবয়স্কসুলভ আচরণ আশা করতেন। পারভেজ এ ব্যাপারে স্যারের অভিমানের কথা উল্লেখ করেছে। স্যার কাউকে অনুপ্রাণিত করেছেন ভাল বই পড়ার জন্য, কাউকে উৎসাহ দিয়েছেন তাঁর মতোই ভ্রামণিক হতে, কাউকে গানের রেকর্ডের সন্ধান দিয়ে; কেউবা তাঁর প্রেরণায় গড়ে তুলেছে নিজস্ব লাইব্রেরি। স্যারের মস্তিষ্কের পরিধি নাকি ছিল গড়পড়তা পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়ে বেশি, রাব্বীর এই অবৈজ্ঞানিক আবিষ্কার রফিক কায়সারকে নিয়ে ছাত্রদের কৌতূহলের চরম অবস্থাই নির্দেশ করে! প্রবাসী এক ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, রফিক কায়সার স্যার যে ক্যাডেটদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ক্যাডেটজীবন নিয়ে যে অভিসন্দর্ভ লিখতে চেয়েছিলেন, তার কোনো অগ্রগতির সংবাদ আছে কি না।
আমার জন্য খুবই গৌরবময় ব্যাপার এই যে, স্যারকে অনুরোধ করায় আমার স্মৃতিপাঠের বই ‘ অক্ষরবন্দি জীবনে’র ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন, যেখানে বলেছেন, “ কিশোরবেলা থেকেই মোশতাক আহমদ সাহিত্য অন্তপ্রাণ। পেশায় চিকিৎসক হলেও তার অন্তর্গত রক্তে খেলা করে কবিতার ধ্বনিময় প্রতিধ্বনি। এই ধ্বনিময় প্রতিধ্বনি ক্রমশঃ প্রাণ পায় উপমা, রূপক, প্রতীক আর ছন্দের দোলাচলে, এই দোলাচলের অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে মানুষ, প্রকৃতি আর বাঙলা নামে দেশটার প্রতিরূপ। … রূপকথার গল্পের মতোই কবি নির্মান করেছেন তাঁর প্রাণ ভোমরা ‘ শহীদ খুরশিদ গ্রন্থাগার’কে। ছেলেবেলার পাঠ্যস্মৃতিকে চলমান রেখেছেন বর্তমান কালের স্মৃতি সত্তায়। লেখকের বলার ভঙ্গিটা স্বতঃস্ফূর্ত ও বৈঠকী। ফলে মোশতাক আহমদের পাঠ্যস্মৃতি পাঠকের হৃদয়মনকে স্পর্শ করে। গদ্যের শৃঙ্খলা ও পদ্যের আবেগের যুগলবন্দিতে ‘ অক্ষরবন্দি জীবন’ পাঠককে নিয়ে যাবে অন্য এক অভিজ্ঞতায়।
“সম্প্রতি আমি কবি আবুল হাসানের জীবন নিয়ে একটি উপন্যাস লিখছি। সেই সুত্রে রফিক স্যার কবি আবুল হাসান আর হুমায়ূন আহমেদের সাথে তাঁর স্মৃতির কিছু হিরন্ময় কথকতা আমার সাথে ভাগ করে নিয়েছেন।
শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন হীরকখণ্ডই তো উত্তর প্রজন্ম তাদের জাদুঘরে সাজিয়ে রাখে।
ছেলেবেলায় মনে করতাম জাদুঘরে একজন জাদুকর থাকেন যিনি নানারকম জাদু দেখাতে থাকেন। তাঁদের কেউ কেউ হ্যামিলনের রঙিন বংশীবাদকের মতো, কিংবা সক্রেটিসের মতো আমাদেরকে নতুন নতুন রাস্তায় হাঁটতে নিয়ে যাবেন। সেই ভুল পঞ্চাশ বছরেও ভাঙেনি। পঞ্চাশ বছরে জীবনের জাদুঘরে কমবেশি সঞ্চয় জমেছে। এখন সেই জাদুঘরে কয়েকজন জাদুকরকে ঘুরে বেড়াতে দেখি। রফিক কায়সার স্যার তাঁদের অন্যতম।
#সংযোজন ( আমার ডকুফিকশন ‘ ঝিনুক নীরবে সহো’ থেকে’)
দুপুরে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনে এক টাকা দামের তেহারি খেতে এসে রফিক কায়সারের সাথে হাসানের দেখা। এখানে আসাটা রফিকের জন্য খুবই প্রলুব্ধকর অভিজ্ঞতা। যাদের সাথে ক্লাসে দেখা হয় না, অর্থাৎ যাদের ছাত্রত্ব ঘুচে গেছে, এখানে তাঁদের সাথে দেখা হয়। হাসান সেদিন রফিক, সাযযাদ, নির্মলেন্দু, হাফিজদেরকে টাটকা কবিতা ‘মিস্ট্রেস : ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’ শোনালেন। নির্মলেন্দু দলবল নিয়ে তোফায়েল আহমদের মিটিং শুনতে গেলেন। রফিক বললেন, হাসান ভাই, মিস্ট্রেস একটা অসামান্য কবিতা। আপনার তো ন্যুনতম একটা তেহারি আর চা পাওনা হয়ে গেল। হাসান বললেন, তেহারি খাবো না। দুই কাপ চা আর বাটার টোস্ট নিয়ে নভেরার গড়া ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দুজনে ঘাসের উপর বসলেন। হাসানের হাতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার মাছি খুন করেছি’ বইটা দেখে রফিক খুব আগ্রহ করে বইটা হাতে নিলেন। পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখ আটকে গেল ‘ সে বড়ো সুখের সময় নয়’ কবিতাটিতে। এ যে হাসান আর নির্মলেন্দুরই দিনপঞ্জি! রফিক জিগ্যেস করলেন, কি হাসান ভাই, ভাব এসেছে?
রফিকের এই প্রশ্নের সাথে হাসান খুবই পরিচিত। হাসান অসময়ে রমনা রেস্তোরাঁয় এক কাপ চা নিয়ে বসে কবিতা লিখতে লিখতে কাগজ ছিঁড়তে থাকেন দেখে রফিক তাঁকে খোঁচান- হাসান ভাইয়ের ভাব উঠেছে! হাসান মৃদু হেসে এড়িয়ে যান, কবিতার লাইনগুলোকে ধরে রাখাটাই আসল কাজ। পোলাপান যা খুশি বলুক!
বারোটা ফোল্ডিং চেয়ার ফাঁকা করে কবি- সাহিত্যিকরা চলে গেলে সারাদিন ল্যাবরেটরি আর ক্লাস শেষে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনের ভাঙা হাটে আসেন হুমায়ূন আহমেদ। কোনার দিকের চেয়ারে বসে এক কাপ চা খেয়ে চলে যান লাইব্রেরিতে বসে কিছুক্ষণ সাহিত্যের বই পড়ার জন্য। কখনো আনিস সাবেত সাথে থাকেন। রফিক কায়সারের সাথে অন্তর্মুখী হুমায়ূনের একটা সুসম্পর্ক হয়ে যায়। হুমায়ূন জিজ্ঞেস করলেন, কবি, নতুন কি কবিতা লিখলেন? রফিক বললেন, কাল একটা কবিতা লিখব ভাবছিলাম। নাম দিয়েছি ‘শঙ্খনীল কারাগার’। কিন্তু কবিতার যে শিল্প প্রতিমা আমার মননে গেঁথে আছে, তার সাথে এই দমবন্ধ করা কিংবা উত্তাল সময়টাকে মেলাতে পারছি না। লিখতেও পারছি না। হুমায়ূন বললেন, অতশত ভেবে কি আর কবিতা লেখা যায়। নিজের খুশিমতো লিখে ফেলুন।
হুমায়ূনের মাথায় একটা গল্প ঘুরছিল। রফিক কায়সারের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ নামটিকে গল্পের নাম হিসেবে মনে মনে পছন্দ করে ফেললেন। হুমায়ূন ইতোমধ্যে একজন ম্যাজিশিয়ান হিসেবে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন। ছাত্রদের হাত দেখে ভবিষ্যৎবাণীও করেন। তাঁর একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি আছে। সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে কবিতা লিখেন।
অবশ্য সমসাময়িক কবিদের তেমন ভক্ত নন। তারপরেও নির্মলেন্দু গুণ বা আবুল হাসানের কবিতা তাঁর চোখে পড়ে, বিশেষ করে নির্মলেন্দুর গতিবিধি খেয়াল রাখেনই একই এলাকার সন্তান বলে। হুমায়ূন মাঝে মধ্যে নিজের কবিতাগুলো ছোট বোন মমতাজ বেগম শিখুর নামে পত্র-পত্রিকায় পাঠান। ছাপাও হয়।
রফিক আর হুমায়ূন যখন সান্ধ্য আড্ডা শেষ করে মহসিন হলে ফিরে যাচ্ছেন, হাসান ততক্ষণে শক্তি চট্টোপাধায়ের মতো মাঝরাতে ফুটপাত বদল করার অভিযানে নেমেছেন নির্মলেন্দুর সাথে। রফিক ফিরে যান ২৫৮ নম্বর রুমে আর হুমায়ূন ফিরে যান ৫৫৬ নম্বর রুমে।
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD