কবিতার শুরু

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ | 500 বার

কবিতার শুরু

ব্যাপারটা জীবনানন্দ বাহিত হয়ে এসেছিলো। রূপসী বাংলা লিখলেন। কোলকাতার নাগরিক খোলসটা উদাম করতে চাইলেন। নগর-সমাজ গড়ে ওঠার প্রক্কালে বস্তু জগতে যে পরিবর্তন এলো, সেই পরিবর্তনকে অনেকটা ক্লান্তিকর ও জীবনবিঘ্নকারী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত ক’রে বারবার সেগুলোকে রিজেক্ট করলেন।

মোটরকারের গাড়লের মতো কেশে যাওয়া থেকে শুরু করে এঞ্জিন-চঞ্চল-ডানা পর্যন্ত সবকিছুই তার মানবিক বোধ-সম্পন্ন মানসকে বারবার ছিন্নভিন্ন করেছে। গ্রামীণ সমাজ আর নগর সমাজের মধ্যে পালাবদলের কালে যে টানাপোড়েন পৃথিবীব্যাপী কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে আমরা প্রত্যক্ষ্য করেছি, সেই ডায়লেক্টিকাল জায়গাটা জীবনানন্দেও প্রকটভাবে এলো।

তাই শুধু নাগরিক যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, চারপাশে যে ট্যাকনোলজিক্যাল আবিষ্কারগুলো হয়েছে, সেই উপাদানগুলিকে নিগেট করে দিয়ে কবিতার যে প্রতিষ্ঠা, তাও দিনদিন কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে গেলো।

বরং অগাছালো আর অপরিকল্পিত শহরই আমাদের ধ্যানের জায়গা। এর রাস্তায় যে গর্তগুলি আছে, গর্তগুলি কি আপনাদের কাছে বিরক্তিকর লাগে?

আক্ষরিক অর্থে খাদ একটা বিপদজনক বস্তু। সিটি কর্পোরেশন কেনো জনগণের সার্থে এই খাদগুলিকে মাটি দিয়ে ভরাট ক’রে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না এই নিয়ে ভাবিত হওয়ার জন্য রাজাবাজারের জাহাঙ্গীর ভাই-ই এনাফ।

কিন্তু ছোট আর তলা দেখা যাওয়া একটা গর্ত নিয়ে কবিতার কিছু বলার আছে। যেখানে বর্ষার দিনে আচম্বিতে ঝেঁপে আসা বৃষ্টির পানি সেই গর্তে জায়গা করে নিয়েছে। আর সেই কাচের মত স্বচ্ছ পানিতে ছোট্ট এক টুকরা আকাশ বিম্বিত হয়ে আছে। সেই গর্তে আবার পা পড়ে গেলে সেই দৃশ্য নিমিশেই কাদা-পানি হয়ে গেলো। তখন আর পিছুটান রাখার প্রয়োজন নাই। ভাবতে পারেন যে এই কাদায় জড়িয়ে যাওয়া পা-জুতা আর প্যান্টের মধ্যে একটা শীতলতা কাজ করছে। অভিযোগ আর বিরক্তি প্রকাশের জন্য কবিতা সঠিক জায়গা নয়।

তীব্র ভেঁপুর আওয়াজ কানে দড়াম করে বাড়ি খায়। কিন্তু দেখবেন কিছু কিছু ভেঁপুর আওয়াজ শুনে চিত্তে বেশ আনন্দদায়ী আবেশ সৃষ্টি হয়।

আবার শহরের গগনবিদারী কোলাহলের মধ্যে হঠাৎ ট্রেনের লম্বা ভেঁপুর শব্দ শুনে বেশ আন্তরিক লাগে কিন্তু, তাই না? মনেহয় যেনো আমাদেরকে সেই ট্রেন তার বগিগুলিতে ওঠার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। নারে ট্রেন-ভাই তোমার এই আর্তনাদ শোনার সময় আমার কম, আমার অফিস আছে। নষ্টালজিয়া ভেঙে গেলো। নষ্টালজিয়া বিলীন করে দেওয়াটাই কবিতার কাজ।

যুদ্ধের সময় আমরা গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আবার শহরে ফিরে এসেছি। তার অনেকদিন পর ১৯ কি ২০ বছর বছর বয়সে যখন শামীম-এর সাথে বন্ধুত্ব হলো, একদিন শামীম বললো বাসার মধ্যে বড় হওয়া এই পোষা পেয়ারা গাছটাও কতো প্রিয় ছিলো একদিন। কবিতার মধ্যে যদি মাত্রাতিরিক্ত স্মৃতিকাতরতা কাজ করতে থাকে তাও কবিতার জন্য ক্ষতিকর। সেই কাতরতা যদি আমার নিজের কবিতার মধ্যেও থাকে সেই ক্ষতিকারক পাল্লার মধ্যে আমিও পড়ি।

তবে শহরের উঁচুনিচু বিল্ডিংগুলি একটা দ্যোতনা তৈরি করে। হঠাৎ লিফটে নামতে নামতে অপরিচিত একটা মেয়ের মুখোমুখি হয়ে গেলে তখন সময়টা পাল্টে যায়। লিফট থেকে নেমে যাবার পর দু’জন দুদিকে চলে যাওয়ার পরই আপনার কবিতার শুরু।


দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD