॥ ॥
আমার প্রথম উপার্জন ৩০ টাকা। বাংলা একাডেমির কিশোরপাঠ্য পত্রিকা ‘ধান শালিকের দেশ’-এ ছড়া লিখে। পত্রিকাটির সম্পাদক তখন কবি মযহারুল ইসলাম। তিনি তখন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। লিখলে যে টাকাও পাওয়া যায়, এর আগে সেকথা অজানা ছিল। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ। আমি তখন স্কুলে পড়ি। ক্লাস টেন। জীবনের অনেক প্রথমের মতো এই প্রথমের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে আমার মায়ের স্নেহ। লেখালেখির কারণে তাকে তখনই অনেকে একনামে চেনেন। রাবেয়া সিরাজ। মায়ের ‘তিনকন্যার কাহিনি’ বইয়ের গল্পগুলো নিরক্ষরবেলা থেকে শুনতে শুনতে আমার প্রায় মুখস্থ। গল্পগুলো শুনিয়ে একসময় মা ঘুম পাড়াতেন। এ প্রসঙ্গ থাক; প্রথম উপার্জনে মায়ের ভূমিকার কথাই বলি। ৩০ টাকা তো নগদে আসেনি; পেয়েছি চেক মারফত। তাকে টাকায় রূপান্তর করতে হলে ব্যাংকে যেতে হবে। চেক তো ক্রস। অ্যাকাউন্ট না থাকলে তো মিলবে না নগদ! গুরুতর এ সমস্যা থেকে মা-ই উদ্ধার করলেন তার আদরের ছেলেকে। একশ টাকার একটি নোট হাতে ধরিয়ে বললেন, “ব্যাংকে গিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে এই চেকটা সেখানে জমা দিয়ে আয়; বাকি ৫০ টাকা তোর।” কোন ব্যাংকে যাব, কার সাহায্য নেব— টেলিফোনে যোগাযোগ করে মা-ই সব ঠিক করে দিলেন। আমাকে আর পায় কে? উপার্জনের ৩০ আর মায়ের স্নেহের ১০০— ১৩০ টাকায় সেদিন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তবান মানুষ! ব্যাংকে ঢুকলামও সেই ভঙ্গিতে। বেরুনোর সময়ও ভঙ্গির কোনও পরিবর্তন নেই। পকেটে কোনও টাকা বা ক্রেডিট কার্ড না থাকলেও আজও আমি একই ভঙ্গিতে চলাচল করি। এ আমার মায়ের দোয়া। মায়ের আশীর্বাদ সঙ্গে থাকলে আর কিছুই লাগে না। বাঘকেও বেড়াল মনে হয়। অনেক রিকশার পেছনে ‘মায়ের দোয়া’ কথাটা লেখা থাকে। দুই শব্দের ঐ বাক্যটিই আমার কাছে জগতের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD