জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ কোনো স্মৃতি লিখব না। কেবল ছোট্ট করে বলতে চাই এই ক্যাম্পাস থেকে আমি কী পেয়েছি।
যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েছি, তার অনেক আগে থেকেই আমি কবিতা লিখি এবং সেসব প্রকাশিতও হয়—ছোট কাগজ ও জাতীয় দৈনিক দুই মাধ্যমেই।
তবে আমার জীবনে জাহাঙ্গীরনগরের অমোচনীয় প্রভাব রয়েছে। সেটা কোন দিক দিয়ে? কাব্যকলার দিক দিয়ে তো নয়। তাহলে?
জাহাঙ্গীরনগর আমাকে বহুরৈখিকভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। এখানে আমি এবং আমরা প্রথাগতভাবে ক্লাসরুম থেকে কত দূর কী শিখেছি, তা হিসেব করে বলতে হবে। কিন্তু বেহিসেবে এটা বলাই যায়, এই ক্যাম্পাসে, হাঁটতে হাঁটতে, ঘুরতে ঘুরতে, বটতলা কি প্রান্তিক অথবা ডেইরি গেটে আড্ডা দিতে দিতে শিখেছি বিস্তর। এর মধ্যে কবিতা–সাহিত্য–নাটক তো বটেই আরও ছিল রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, নিন্মবর্গের ইতিহাস… কত কত বিষয়! মুহূর্তেই এক বিষয়ের সঙ্গে আরেক বিষয় মিলেমিশে জট পাকিয়েছে। আবার সেই জট খুলেছিও রয়ে সয়ে।
এখন যখন গোপাল ভাঁড়, পূর্ব বাংলার টোল ব্যবস্থা, বাংলাবাজার অথবা পূর্ব বাংলার জীবনধারা নিয়ে আমার ভাবনা জাগে, জাহাঙ্গীরনগরের বটতলার রাজ্জাক ভাইয়ের ভাতের হোটেলের সেই আড্ডাগুলো মনে পড়ে খুব।
ফলে আমার অকিঞ্চিৎকর এই জীবনের কাব্যচর্চার সঙ্গে রাজনীতি আর ইতিহাস চিন্তার যে মিশেল ঘটেছে, স্বীকার করতেই হবে তার রসদ আমি পেয়েছি জাহাঙ্গীরনগর থেকে।
একদা নির্লিপ্ত নয়ন নামে এক নবীন কবি যে জিজ্ঞাসা কাতর হতে হতে, আলতাফ শাহনেওয়াজ হয়ে উঠল, কোনো বিষয়কে নানা পরিপ্রেক্ষিত থেকে ক্রিটিক্যালি ভাবতে শিখল, এর পেছনে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীরনগরের তর্কসংকুল দিনরাতগুলো কি আমি অস্বীকার করতে পারব?
এই ক্যাম্পাস প্রথমত তর্ক করতে শিখিয়েছে আমাকে। ভাবতে শিখিয়েছে। মথা নত না করার শিক্ষাও পেয়েছি এই বিদ্যায়োতন মারফত।
তাই নৈসর্গিক ও শিল্পসাহিত্যের মৌতাতে আচ্ছন্ন জাবি ক্যাম্পাসের জীবৎকাল বরাবর আমার কাছে এক রাগী ছোটকাগজ বা দ্রোহী লিটল ম্যাগাজিন, যে বারবার প্রথা থেকে বের হয়ে আমাকে অপ্রথাবদ্ধ হওয়ার সংকল্পে উদ্বুদ্ধ হতে শেখায়।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD