মন, দর্শন এবং জীবন— এই ত্রয়ী বোধের সমন্বয়ে সৃষ্টি অপূর্ব চৌধুরীর ‘অনুকথা’। অণু এবং অনু শব্দদ্বয়ের দুটো অর্থ। অণু বোঝায় অল্প বা ক্ষুদ্র। কিন্তু অনুকথার অনু’র অর্থ তা নয়। এখানে অনু অর্থ পশ্চাৎ। ‘অনুকথা’ সেই পেছনের কথা, আড়ালের কথা। এককথায় জীবনের ভেতরে জীবনের কথা। এক জীবনের ভেতর অন্য এক যাপিত জীবন ৷ যে জীবনকে সে বোঝে, কিন্তু মানতে পারে না; যে জীবনকে সে মেনে চলে, কিন্তু বোঝে না। ধীরে ধীরে ‘অনুকথা’ সেই জীবনের জট ভাঙে৷ কখনো দর্শনে, কখনো মননে, কখনো বা ধীরলয়ে বলে ওঠে– “যা চলে গেছে তা জীবন নয়, যা আছে সেটাই জীবন।”
নিত্য বোধগুলো ভেঙ্গে এক একটি বাক্য দিয়ে বানিয়ে চলে উপলব্ধির নতুন সালুন৷ বাঁধা চোখ খুলে অপূর্ব চৌধুরী দেখিয়ে দেয়—
“প্রতিটি জীবনই এক একটি জীবন্ত বই, কারো কারো বাঁধাই করা, কারোটা ছেঁড়া পাতা ৷”
মানুষ জন্মে এক টুকরো সাদা কাগজের মন নিয়ে। দিন বাড়ে, মনের কাগজে পড়ে সময়ের রং। কখনো ধূসর, কখনো রঙিন। ভারী হতে থাকে জীবন পাতার সঞ্চয়। কালে কালে বোধের পোতাশ্রয়ে ঘর বাঁধে অভিজ্ঞতার শিকড়। জন্ম নেয় জীবন দর্শন।
“সাধারণের কিংবা খ্যাতিমানের দুঃখ বলে আলাদা কিছু নেই। সব কষ্টের রং একই, পাত্র শুধু ভিন্ন।”
‘অনুকথা’ এক জীবনের অন্তরালে বহুধা জীবনের বহতা। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরা, গভীরতায় দ্যুতি ছড়িয়ে এক একটি বিষয় হয়ে ওঠে অনেকগুলো আণবিক চিন্তার প্রকাশ। লেখার কথা বলতে গিয়ে অপূর্ব চৌধুরী বলে ওঠেন:
“লেখা মানে নিজেকেই নিজের ভেতর খোঁড়াখুঁড়ি ৷”
‘অনুকথা’ জীবনকে ভাবায়, জীবনকে ভালোবাসায়, জীবনের পথে পথে হেঁটে দেখায়:
“দরকারি শেখার সহজ পথ হলো— আগে অদরকারী বাছাই করতে শেখা।”
অপূর্ব চৌধুরী’র মন, দর্শন, জীবন দু’হাজার পনেরোতে যাত্রা শুরু করে চারটি সিরিজের মধ্যদিয়ে ছোট ছোট জীবন কথায় এক একটি পূর্ণ অভিব্যক্তির বিপুল সমাবেশ।
বই ঢাউস নয়, কিন্তু বোধের পেল্লায় বিস্তৃত তার স্ফুটন। পাতায়-পাতায় ছড়িয়ে আছে বিশাল জীবনের বিচিত্র প্রকাশ। কখনো বলে ওঠে—
“মৃত্যু ভয় না করলে বেঁচে থাকার প্রতিটি দিনই এক একটি নতুন জীবন।”
জীবনের আড়ালে থাকে জীবনের আসল প্রভেদ, জীবনের দর্শনে থাকে দেখার ফারাক, মনের ঘাটে ঘটনার তরী ঠিক করে অর্থের বেদন। ‘অনুকথা’ এমন সব চৈতন্যের কথামালা।
“থামতে জানলে অনেক দূর চলা যায় ৷”
অপূর্ব চৌধুরী’র ‘অনুকথা’ বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে এমন এক বিরল সংযোগ।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ-ফিচার-তথ্যমূলক লেখা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট ছবিসহ আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : desherboi@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD