বইয়ের খবর

চাণক্য বাড়ৈ এর ‘জলমানুষ’ উপন্যাসে সর্বধর্ম বনধর্ম

মঙ্গলবার, ০২ নভেম্বর ২০২১ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ | 639 বার

চাণক্য বাড়ৈ এর ‘জলমানুষ’ উপন্যাসে সর্বধর্ম বনধর্ম

সুমন কুমার


পৃথিবীর বহুদেশে ম্যানগ্রোভ বন আছে। কিন্তু সুন্দরবনের মতো এত বড় আর নেই, যার ব্যাপ্তি দুইটি দেশ জুড়ে এবং প্রত্যক্ষ নির্ভরশীল কোটির উপর মানুষ। বৈধ যেমন আছে, আছে অবৈধ নির্ভরশীলও। আরও আছে, সমাজ থেকে বিচ্যুত ঝুঁকিবহুল জীবনযাপন করা মানুষ। পরের আহরিত সম্পদ কেড়ে নেয়া-ই যাদের জীবন ধারণের উপায়-ওরাই জলমানুষ।

 

তাদের জীবনে আনন্দ মানে বানিয়াশান্তা। বহুদূরে তাদের স্ত্রী সন্তান অপেক্ষায় থাকে। কারো কারো ঘর বাঁধার ইচ্ছেও জাগে বানিয়াশান্তার কোন রূপসীর সাথে। এই প্রেমে দারিদ্র, বংশ মর্যাদা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্য হিংস্র জীব, সমাজ-পরিবার তাদের বাধা নয়, মাঝখানে কেবল বুলেট। জলমানুষ রুস্তম আর ফুলমতির মাঝে যেমন তামজিদের বুলেট! একটি বুলেট ছুড়ে অন্যের জীবন শেষ করে সুখে থাকা সম্ভব? উত্তর পেতে হলে তামজিদকে জানতেই হবে সুতরাং পড়তে হবে উপন্যাসের শেষ অবধি। নয়তো জানা যাবে না তন্দুরির ফিরিয়ে দেয়া একটি জামদানি বুলেটের চেয়ে কিছুতেই কম নয়।

 

একটি দূর্গম বনাঞ্চলে মা বনদেবী বা বনবিবি ধর্ম নির্বিশেষ একই অর্থে-শক্তিতে প্রকট। এখানে তবে সার্বজনীন ধর্ম বনধর্ম, এও জানা হয় ‘জলমানুষ’ উপন্যাস থেকে। সুন্দরবন আলিফ লায়লার মনোমুগ্ধকর কাহিনির চেয়ে কম কী! ওই যে ‘পরীদের ধরে এনেছে, জিনকেও বেন্ধে রেখেছে’, খুঁজলে পাওয়া যায় মন্ত্রবলে নির্দিষ্ট সীমানায় বাঘ বন্ধ করে রাখার মানুষও। জলমানুষদের চলচ্চিত্রে ফরেস্ট্রার আব্দুল মমিনরা সস্ত্রীক পাসিং শট ছাড়া আর কিছু হয়ে উঠতে পারে না।
দয়া-মায়া বলতে এই বনে কিছুই থাকতে নেই। এখানে যৌনতার জন্য শরীর স্পর্শ না করলেই নারীকে সম্মান করা হয়ে যায় কিন্তু তার গায়ের শাড়ি খুলে নেয়াটা কেবল পেশাগত দায়িত্ব! এসব অনাচারের কোন দায় বা গন্ধ কিছুই শিকদার ভাই কিংবা রশীদুদ্দিন ভাইদের স্পর্শ করে না। তাহের-খালেদরা কেবল অসাধারণ ভিডিয়ো গেমের চরিত্র, জয়স্টিক শিকদার-রশীদদের হাতে। এই জটিল জীবনের উপাখ্যান ধীরে ধীরে পাঠককে সুন্দরীর (সুন্দরবনের) প্রেমিক করে তোলে শেষাবধি। প্রেমিক না হয়ে উপায় কি! ওই তো আমাদের বাঁচায় বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রচণ্ড ঝড় থেকে।

 

সংলাপে খুঁজে পাই খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের স্থানীয় মানুষের আঞ্চলিক শব্দের ভাণ্ডার। সুন্দরবনের নদী আর মোংলা-চালনা বন্দরের বিদেশি জাহাজ চাণক্যের চমৎকার সব বর্ণনায় চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়, সিনেমার পর্দা নাকি! ডাকাতির অপারেশনের বিবরণ দুর্দান্ত কোন অভিযানের দৃশ্যকেও হার মানায়। ডাকাতদের পক্ষ নিলে উত্তেজনায় বুক কাঁপে, কবলে পড়া নিরীহ মানুষের পক্ষ নিলে কাঁপে হাত-পা। আড় পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ, বলেশ্বর, রূপসা, সেলা এইসব নদ-নদীর বিবরণে কামোট কুমিরের ভয় এসে ভর করে পাঠক মনে। এই বুঝি কুলোর মতো ফনা তুলে ঢংক দিলো নির্দয় সাপ।

 

জলে কুমির ডাঙায় বাঘ, গাছে সাপ আবাসে পুলিশ, জঙ্গলের আড়াল মানেই বুলেটের গোপন উৎস, কোথায় যাবো? এই মহাবন পার হতে হবে দ্রুত, তাই শেষ করতে হবে জলমানুষ উপন্যাস। সম্ভব হলে এক বসাতেই। তবেই পাঠক মুক্তিপাবে বনগ্রস্ততা থেকে।

 

জলমানুষ
লেখক : চাণক্য বাড়ৈ
ধরন : উপন্যাস
প্রকাশক : ভাষাচিত্র
মুদ্রিত মূল্য : ৩৩০ টাকা

 


[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ-ফিচার-তথ্যমূলক লেখা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট ছবিসহ আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : desherboi@gmail.com ]

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD