বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে
লেখক : মৌলি আজাদ
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
প্রকাশনী : আগামী প্রকাশনী
মূল্য : ২০০ টাকা
লেখক পরিচিত
প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ এবং বি আই আই এস এস এর সাবেক কর্মকর্তা লতিফা খানমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ। শিল্প সাহিত্য সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা মৌলি মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার প্রতি প্রতিনিয়ত আকর্ষিত হন। অবিরাম মগ্ন থাকেন মনন ও সৃজন প্রক্রিয়ায়। নিরলসভাবে গল্প-প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি তিনি কর্মজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জীবন ও কর্ম দুটোই তাঁর কাছে সমান গুরুতবপূর্ণ বলেই তিনি অভিহিত করেন। অগণিত পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত মৌলি আজাদের প্রথম স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা’ প্রথম আলোর সেরা ১০টি গ্রন্থের অন্তর্ভুক্তিসহ ‘নাট্যসভা’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে। এ পর্যন্ত মৌলি আজাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। ২০১৮ সালে মৌলি আজাদ সাহিত্যে কলকাতা থেকে ‘বিশেষ বঙ্গবন্ধু পুরষ্কার’ পান।
বই নিয়ে কিছু কথা
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখক বলেছেন, “আজকাল কিশোরদের জন্য লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। স্মার্টফোন-ট্যাব আজ তাদের সবার হাতে হাতে। গুগল, ইউটিউব সার্চ করে তারা তাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্যই হাতের এক আঙ্গুলের ক্লিকে নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তারা বইয়ের পাতায় সহজভাবে পড়ার ছলে জানতে চায় বেশ কিছু বিষয়। তাই সমকালীন বিভিন্ন বিষয়, যা নিয়ে কিশোরদের (অচিরেই তারা তরুণ-যুবক হয়ে যাবে) মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদন্ধ। সে বিষয়গুলো নয়টি গল্পের মাধ্যমে আমি আমার লেখায় তুলে ধরেছি। প্রতিটি গল্পের বিষয় একেবারে আলাদা, কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।”
লেখক যথার্থই বলেছে বইটির সম্পর্কে। সহজভাবে এই বই সম্পর্কে এত ভালো বর্ণনা আর কোনভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান জেনারেশন আমার কাছে অনেকটা হাইব্রিড জেনারেশন মনে হয়। ভালোভাবে কথা বলতে শেখার আগেই আমরা সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছি স্মার্টফোন। বাস্তব দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকা এই প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের মনের নানান রকম নেতিবাচক দিক এবং সেই সব নেতিবাচক দিক থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে চেয়েছেন লেখক তাঁর এই বইয়ে। এই নয়টি গল্পের মধ্যে যেমন উঠে এসেছে সমাজে নারীদের প্রতি পুরুষদের লোলুপদৃষ্টিপাতের ঘৃণ্য কাহিনী ঠিক তেমনি স্থান পেয়েছে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনীও। বাস্তবসম্মত গল্পে সমৃদ্ধ এই বইটি কিশোরদের কথা মাথায় রেখেই লেখক সুনিপূণ দক্ষতায় রচনা করে গেছেন।
নামকরণ
‘বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’ নামটি দেখে আগামী প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে যে শব্দটি আমার মুখ দিয়ে প্রথম বের হয়েছিল সেট “বাহ!”; বইটির পরতে পরতে সত্যিই যেন স্বপ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেশকে নিয়ে স্বপ্ন, নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন, জীবন নিয়ে স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। সত্যিই বইয়ের প্রতিটি পাতা স্বপ্ন বুনবে কিশোর পাঠকের মনে!
প্রচ্ছদ
ধ্রুব এষ কোন প্রচ্ছদ করলে সেটার পিছনে নিশ্চয় কোনো না কোনো অর্থ থাকে। এই বইটির প্রচ্ছদও বেশ নজরকাড়া কিন্তু অর্থবহ কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে আমার মনে। তবে বর্ণিল প্রচ্ছদে বইটি রাঙিয়ে তুলতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি ধ্রুব এষ। আমার অনেকটা সেই ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপণের ডায়লগটা মনে পড়ছে, “ভালো তবে আমার মোনার মত নাহ!”
ভাষা বিশ্লেষণ
বেশ সাবলীল শব্দের প্রয়োগ করছেন লেখক এই বইয়ের প্রতিটা গল্পে। যে কোনো বয়সের পাঠকের কাছে সুখপাঠ্য হবে এই রচনা। বাড়তি মেদ-চর্বিহীন প্রতিটি গল্প শেষ করতেও বেশি সময় লাগবে না বলেই আমার ধারণা। পাঠক এই গল্প পাঠের পর গল্পের শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত হবেন। মার্জিত বাক্য চয়নের মাধ্যমে সমাপ্তি টেনেছেন প্রতিটি গল্পের। এই ধরণের রচনা সত্যিকার অর্থেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বেশ জরুরি। অবশ্য একটা দিক আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশ ভাল লেগেছে সেটা হল, লেখক চিরায়ত শব্দের বদলে হালের বহুল প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করেছেন গল্পে এতে টার্গেটেড রিডার মানে কিশোররা পড়তে আগ্রহবোধ করবে বেশি। সামগ্রিক ভাষার প্রয়োগ বেশ প্রাণবন্ত।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
আমি খুব ধীরে পড়লেও এই বই পড়তে আমার বেশি সময় লাগেনি; এর কারণ গল্পগুলোর বিষয়বস্তু আর লিখনশৈলী। প্রতিটি গল্প বেশ চিন্তা-প্রসূত বলেই আমার মনে হয়েছে। লেখক এই গল্পের বিন্যাসক্রম বেশ মনোযোগের সাথেই করেছেন, যার ফলে গল্পগুলো পড়তে পাঠকদের খুব একটা বেগ পেতে হবে না। আমি খুব মজা পেয়েছি। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের করণীয় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সচেতন হতে পেরেছি এই বইটি পড়ে। নিঃসন্দেহে একটি ভালো বই ‘বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে।’ লেখকের কাছে এই ধরণের আরও লেখা প্রত্যাশা করব আগামী প্রজন্মের জন্য।
—
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ-ফিচার-তথ্যমূলক লেখা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট ছবিসহ আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : desherboi@gmail.com
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD