বিশ্ব মুক্তসাংবাদিকতা দিবসের প্রার্থনা: ‘সাংঘাতিকতা’ নয়, চাই সাংবাদিকতা

শুক্রবার, ০৪ মে ২০১৮ | ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ | 1277 বার

বিশ্ব মুক্তসাংবাদিকতা দিবসের প্রার্থনা: ‘সাংঘাতিকতা’ নয়, চাই সাংবাদিকতা

ক্ষমতার পা-চাটা-সাংবাদিকতার কবল থেকে মুক্তি পাক দেশ।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা তার মর্যাদার আসন প্রায় হারাতে বসেছে। সাধারণের কাছে সাংবাদিকতার ডাকনাম এখন ‘সাংঘাতিকতা’। সাংবাদিক আজ ‘সাংঘাতিক’ নামে পরিচিত হয়। এই বিপর্যয়ের কারণ অবশ্যই সমাজ-সংস্কৃতিতে নিহিত। কিন্তু, আশার আলোটা জ্বালিয়ে রাখার কথা সাংবাদিকতারই। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য!

বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকতা সারাক্ষণ চোখ রাখে সরকারের উপর। সরকার যেন কোনও অপকর্মে জড়িয়ে না যায়, সরকার যেন দুর্নীতি করার সাহস না পায়, সরকার যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, সরকার যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে একচুলও দূরে সরে না যায়— এটি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় সাংবাদিকতা। একইভাবে, অবৈধ বিত্তকেও নজরে রাখে সে। ঠেকায় সিংহভাগ মানুষের অর্থে কতিপয়ের পকেট ভারী হওয়াকে।

সাংবাদিকতার অন্যতম অঙ্গীকার দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষের পাশে ও পক্ষে দাঁড়িয়ে জনমত গড়ে তোলা। এবং এই প্রক্রিয়ায় শক্তিমানদের বাধ্য করা দুর্বৃত্তি থেকে দূরে থাকতে। রাষ্ট্র, সমাজ রক্ষার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, আছে মসজিদ-মন্দির-আইন-আদালত-পুলিশ। কিন্তু ব্যক্তির, বিশেষ করে কণ্ঠহীন দুর্বল মানুষের জন্য আছে কেবল সংবাদ-মাধ্যম। বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা আর শক্তির দাপট থেকে ব্যক্তিকে সুরক্ষা দিতে সবার আগে এগিয়ে আসতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকে সাংবাদিকতা।

কিন্তু, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার চেহারাটা যেন চেনাই যায় না। দুর্বল মানুষের পাশে নয়, ক্ষমতাবান ও বিত্তবানদের সঙ্গেই যেন তাদের গভীর সখ্য। বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি হাত এগিয়ে দেওয়া নয়, ব্যক্তি মানুষকে বিপদে ফেলতেই যেন আমাদের সাংবাদিকতার আগ্রহ প্রবল। ক্ষমতাবানদের ওপরে নয়, বরং ক্ষমতাহীনদের প্রতিই যেন তার রক্তচক্ষু-প্রদর্শন চলে।

আমাদের সাংবাদিকতা সরকারি গাড়িতে চেপে বসে, সরকারের বিমানে উড়াল দেয়, সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসার টাকা নেয়, সরকারের প্লট নেয়, জমি নেয়। তারপর ক্ষমতাবানদের সামনে দাঁত কেলিয়ে কথা বলে, ক্ষমতাসীনদের তোষামদ করতে করতে হাতের তালু ক্ষয় করে ফেলে। সব রকমের ক্ষমতার সাথে-পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তালে আর নির্লজ্জের মতো তার প্রচারে নামে।

দুর্বল আর বিপর্যস্ত আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর সংগ্রাম না করে, তাদের সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ গড়ে না তুলে, এই সাংবাদিকতা হায়া-শরমের মাথা খেয়ে উলটো ক্ষমতাহীন ব্যক্তি/আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দেয়, সাংবাদিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার! আর দুর্বলের ওপরেই চলে তারা সাংবাদিকতার নীতিচর্চা।

আজ, বিশ্ব মুক্তসাংবাদিকতা দিবসে তাই অন্তরের গভীর থেকে উঠে আসে এই প্রার্থনা: ক্ষমতার পা-চাটা-সাংবাদিকতার কবল থেকে মুক্তি পাক দেশ, সাংবাদিকতা সহায় হোক দুর্বল আর অসহায় সাধারণ মানুষের।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD