॥ শামীমা ইসলাম ॥
“অতীত চলে গেছে, বর্তমান ধীর গতিতে চলছে এবং ভবিষ্যত অন্ধকার”
– উপরের এই চমৎকার উক্তিটির লেখক আর. কে. নারায়ণ। তার ডাক নাম ছিল কুনজাপ্পা। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় ইংরেজী সাহিত্যে তিনি অকৃতকার্য হয়েছিলেন। আর তাই বাবার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য হাতে বই নিয়ে রোজ কলাংক পাহাড়ের চূড়ায় গাছের নিচে বসে থাকতেন। ঠিক সেই সময়টাতেই তিনি দিনের পর দিন সাহিত্যে নিমগ্ন থাকতেন। দুই ভাই প্রতিযোগিতা করে বই পড়তেন। সমারসেট মম, ডিকেন্স, হ্যাগার্ড, মারিয়া কোরেলি, মলিয়ের, টলস্টয়, থমাস হার্ডির মতো বইগুলো ছিল তাদের তালিকায়। তারপর পঠিত বইগুলো নিয়ে নিজেদের ভিতর তুমুল সমালোচনায় মেতে উঠতেন দুই ভাই।
লেখকের প্রথম বই বারবার প্রত্যাখ্যাত হলেও ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকাশিত হয় পঠিত বইয়ের আলোচনা।
বিখ্যাত এই লেখকের ছেলেবেলা কেটেছে নানীর কাছে। মাদ্রাজের নানী বাড়িতে তিনি বড় হয়েছেন রাগী ময়ূর আর চঞ্চল বাঁদরের সাহচর্যে। তার পড়াশোনার সাবর্ক্ষণিক দেখভাল করতেন তার মামা। বাবা-মায়ের সাথে বাৎসরিক ছুটির দিনগুলোতে দেখা হতো বলেই তামিল ভাষায় কথা বলতেও বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। জুনিয়র স্কুল পার করে তিনি জর্জ টাউন স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু ছুটিতে বাবার কাছে বেড়াতে গিয়ে মহীশুরের স্কুলে ভর্তি হতে হয়।
এই লেখকের জীবন ছিল দুঃখময়। উপার্জনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পেশাতেই থিঁতু হতে পারেননি। সাংসারিক প্রয়োজনে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে সবসময় মন পড়ে থাকতো পড়া ও লেখার টেবিলে।
তিনি যা উপন্যাস লিখেছেন তার সবগুলোই তার জীবনসংশ্লিষ্ট। নিকট আত্মীয়রা তাঁর বেশ কিছু চরিত্রে উঠে এসেছে।
তাঁর প্রথম লেখা উপন্যাসটি ছিল স্বামী এণ্ড ফ্রেণ্ডস। উপন্যাসটি বারবার প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। অবশেষে নিউইয়র্কের এক স্বনামধন্য প্রকাশনী থেকে তা প্রকাশিত হয়।
নিউইয়র্কের তিনটি আলাদা প্রকাশনী থেকে তাঁর প্রথম তিনটি বই বের হয়। অথচ প্রতিটি বই বারবার প্রকাশকদের কাছ থেকে ফিরে আসলেও তিনি হাল ছাড়েননি।
এভাবেই নানা চড়াই উৎরাই পার করে মানুষটি একসময় হয়ে ওঠেন বিখ্যাত লেখক আর. কে. নারায়ণ।
একজন পাঠক হিসেবে লেখকের আত্মজীবনী পাঠের সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে সত্যতা। বেশ গোছানো এই লেখকের অগোছালো জীবনের আলেখ্য পাঠককে ‘মোটিভেট’ করবে নিঃসন্দেহে। লেখক তার আত্মজীবনীতে অসংখ্য বইয়ের আলোচনা করেছেন। বইটি পড়ার পর এমন মনে হচ্ছিলো, অনেকগুলো বইয়ের ‘রিভিউ’ পড়ে ফেললাম।
বইটির অনুবাদ ছিল বেশ সাবলীল। তবে হ্যাঁ, বেশ কিছু বানানের ভুল অবশ্য রয়েছে। সব থেকে দৃষ্টিকটু ব্যাপার হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন ভুল করা। হয়তো সেটা টাইপিং মিস্টেক তবুও ৫২ পৃষ্ঠার ‘নীল নভোঘনে আষাঢ় গগনে…’ দ্বিতীয় লাইনটার প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
শেষ করছি লেখকের উক্তি দিয়ে,
“লেখক হিসেবে একবার প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে সব লেখকই বোধ করি তাঁর সৃষ্টিকে অনিন্দ্য করার চেষ্টা না করে নতুন নতুন সৃষ্টির প্রতি আগ্রহী হন বেশী”।
বর্তমান লেখক পাঠক সকলেরই “মাই ডেইজ” বইটি পাঠ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
—
বই : মাই ডেইজ
লেখক : আর. কে. নারায়ণ
অনুবাদ : সৈয়দ হালিম
প্রকাশনী : ঐতিহ্য
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০ টাকা
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD