দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি খ্যাতিমান গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও গবেষক –নূরুননবী শান্ত-এর
প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
প্রথম বই ‘গ্রামে প্রচলিত গল্প’ বের হয়েছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে। আমার বন্ধু ড. সাইমন জাকারিয়া যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। তখন রংপুরে ছিলাম। কেন যে খুব একটা উত্তেজনা বোধ করিনি তা ঠিক নিজেও বুঝিনি। মনে হয়েছিল এ তো হতোই!
লেখালেখির ইচ্ছেটা কেন হলো?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বানিয়ে বানিয়ে গালগল্প ছাড়তাম প্রচুর। ক্লাসের পড়ার চেয়ে বেশি পড়া হতো হাসান আজিজুল হক, মামুন হুসাইন, ইমতিয়ার শামীম, নাসরীন জাহান, কাজল শাহনেওয়াজ, সেলিম মোর্শেদ, মাসুদ খানদের বইপত্তর। বুঝতাম বাংলা সাহিত্য রবীন্দ্র-মানিক-বিভূতিতে নেই। এগোচ্ছে। বড়ভাই রাশেদ কাঞ্চন শ্বাশ্বতিক নামে ছোটকাগজ করা শুরু করলেন। ১৯৯৬ কি ৯৭ খ্রিস্টাব্দ। গল্প চাইলেন। দিলাম। নামটাও রাশেদ দিলেন – সুখলোকে যাত্রা। সান্ধ্যভাষায় লিখেছিলাম।
তারপর আরো নানা ছোটকাগজে। কমলকুমার আর সুবিমলের প্রভাবে এবং মাসুদ খানের কবিতায় আক্রান্ত হয়ে সেসব গল্প লিখেছিলাম। তো, প্রিয় কবি ‘জল রাক্ষস’ এর লেখক আবুবকর সিদ্দিক গল্পগুলোর প্রসংশা করেছিলেন। ওদিকে বগুড়ায় যেতাম তখন বজলুল করিম বাহারদের সাথে আড্ডা দিতে। তারাও সপ্রসংশ। তার আগে লেখক হবার ভাবনা ছিল না মনে। প্রেম করে পুরো জীবন কাটাবার কথা ভেবেছিলাম! হা হা হা। কিন্তু অগ্রজদের উৎসাহে লেখালেখির মজা পেতে থাকলাম। প্রেমের মতোই! এ প্রসঙ্গে বলা দরকার পাঠ্য তালিকায় থাকা টি এস এলিয়টের ট্রাডিশন আন্ড ইন্ডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল।
কিন্তু প্রথম দিকের সেই লেখাগুলি আমার কোন বইয়ে নেই। মনে হয়েছিল, অই তৎসম প্রধান বুজরুকি ভাষা পাঠকের জন্য কমিউনিকেটিভ না। যদিও লেখক বন্ধুরা তা পছন্দ করতেন। এখন মনে হয়, লেখালেখি ছাড়া বাঁচব না তো ।
লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
লেখক জীবন আমার আলাদা নয় স্বাভাবিক জীবন থেকে। আমার তো মনে হয়, লেখকদের জীবন বলে কিছু থাকে না। তারা স্বপ্ন যাপন করে। আপনার লেখা পড়েও, মীর, আমার মনে হয় এ কথা। যে জীবন যাপন করতে চাই সেটাই এই স্বপ্ন। তবে ভালো লেগেছিল, আমার প্রথম বই বের হবার পর আমার এক বন্ধু যে কিনা বই পড়ে না, আমার বইয়ের চল্লিশ কপি কিনেছিলেন। মজা। আপনাকে বলি, ‘আমি লেখক’ এই ভাবটাই আমার আসে না। লেখক জীবনের তাই আলাদা করে কোনো অভিজ্ঞতা ফিল করছি না। শেষ পর্যন্ত যা লিখি সেটাই আমার অভিজ্ঞতা! লেখা শেষ হলে আই ফিল লাইক রিলাক্সেশন অফ ইজ্যাকুলেশন!
বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
ভবিষ্যৎ বলে যদি কিছু থাকে তবে সে সময়ের সৃজনশীলতা ভিন্ন হবে। প্রেক্ষাপটের প্রভাব এড়িয়ে সৃষ্টিকর্ম হয় না। নিশ্চয় প্রকাশ মাধ্যম, ভাষা, অলংকার পাল্টাবে। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সুন্দর রূপের জন্য ভবিষ্যৎ অবধি বেঁচে থাকব না তো। কিন্তু আরও নানা বিশৃংখলা পেরিয়ে বাংলা সাহিত্য – তা যে ফর্মেই হোক লিখিত বা মৌখিক বা ডিজিটাল, কাব্য বা গদ্য, রসালো বা চিন্তামূলক – হয়ে উঠবে মহাবিশ্বের সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্র। বাঙালি ক্যাচাইলা জাতি, মতবিরোধে ভরপুর। সৃষ্টিশীল জাতির ভাবনা-ঐক্য কম থাকে। এখানে লেখালেখি বন্ধ হবে না – পাঠক থাকবে কি না তা অবশ্য বলতে পারব না।
লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ।
যত অনুবাদ করেছি – অয়্যলেন ডান্ডেস, তিমথি রাইচ এর লেখাপত্তরসহ গুরু মনোমোহন দত্তের মহান গানগুলির ইংরেজি করেছি – এগুলো বই আকারে বের করব। আর হ্যাঁ- উপন্যাস লিখতে হবে আমাকে। সরাসরি নিজের মতামত প্রকাশ করার জন্য কলাম লিখে যাব। চিরায়ত বাংলা সংস্কৃতি (ঐতিহ্যবাহি সাধনা নির্ভর পরিবেশনা মূলক সাহিত্য) নিয়ে গবেষণার কাজটা চালিয়ে যাব।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD