পাঁচটি প্রশ্ন

ভালোবাসার জায়গা থেকেই লেখালেখি করতে এসেছি : বঙ্গ রাখাল

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২১ | ৩:৪৯ অপরাহ্ণ | 1040 বার

ভালোবাসার জায়গা থেকেই লেখালেখি করতে এসেছি : বঙ্গ রাখাল

দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি তরুণ কবি ও গবেষক– বঙ্গ রাখাল-এর


 

প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

মানুষের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই এক একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আমিও তো মানুষ। তাই আমার জীবনেও কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। আমার প্রথম প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে একটি সাহিত্যের কাগজ থেকে-সেই বইটার নাম ছিল ‘সংস্কৃতির দিকে ফেরা’। নতুন বই মানেই এক ধরনের উচ্ছ্বাস ভিতরে কাজ করে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বই প্রকাশের পর বন্ধুরা এমনকি বিভাগের শিক্ষরাও কেমন যেন আলাদা ভাবে আমাকে নিজেদের মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। কারণ এমন অভিজ্ঞতা তো এর আগে কখনো হয়নি। এসব দেখে অনেক বন্ধুদের কাছে ঈর্ষারও কারণ হয়েছি। মা অনেক খুশি হয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ঝরিয়েছিল। আর আমার এক চাচা যার কাছে আমি পড়েছি- সেই চাচার সাথে অনেক দিন কোনো যোগাযোগ ছিল না এই বই প্রকাশের পরে তিনি মেলাতে বই দেখে আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন। নতুন বই প্রকাশের পরে আমার ছবি ভোরের কাগজে ছাপা হয়েছিল গ্রামের কিংবা আত্মীয়-স্বজনেরা এই নিউজ দেখে অনেকে সেসময় খোঁজ খবর নিয়েছিল আর এটাই ছিল আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তির । এ রকম অনেক অনেক অভিজ্ঞতা আছে যা বলেও শেষ করা যাবে না।

 

লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো?

আমার বাবা একজন গান পাগল মানুষ ছিলেন। মাও ট্রান্ডিষ্টার বাজিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করতেন। মায়ের কণ্ঠ অনেক মিষ্টিমধুর ছিল। তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর গজল এবং পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া গান গাইতে পারতেন। তো এসব ব্যাপার তো ভিতরে থেকেই থাকে। আর বাবা গ্রামে যেখানেই যেতেন আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতেন এবং গাজিরগান হলে সামনের সারিতে আমাকে বসিয়ে দিয়ে তিনি নিজের মতো গান শুনতেন আর আমি সারারাত জেগে এসব গান শুনে বাড়ি ফিরতাম। আমাদের ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবার লোকগান প্রচলন রয়েছে । এই যে শীতের সময় কীর্তনগান, গাজির গান, অষ্টকগান কিংবা যাত্রাপালা হয়ে থাকে। আমি রাত জেগে কত যে এসব দেখেছি তা আর বলে শেষ করা যাবে না। এসব প্রভাবই হয়তো আমাকে প্রভাবিত করেছে। আর আপনি বলছেন লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো, আসলে এসব ঠিক করে বলাটা মুশকিল যে কেনো হলো। আমি অন্য সবার মত বলতে নারাজ যে অমক কি তমক কিংবা সমাজ পরিবর্তনের জন্য লেখালেখিতে এসেছি এটা না। আমি নিতান্তই ভালোলাগা ভালোবাসার জায়গা থেকেই লেখালেখি করতে এসেছি।

 

লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

লেখালেখির জীবনে অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে তবে- আমার নামের বিষয়টা নিয়েই বলতে চাই । অনেকে আমার নাম শুনে বা লেখা পড়ে ভাবে আমি অনেক বৃদ্ধতিদ্ধ হবো। কিন্তু যখন আমাকে দেখে তখন তারা অনেকেই হতাশ হয় এবং বলেই ফেলে আপনাকে তো দেখার আগে ভেবেছিলাম অনেক বয়ষ্ক একজন মানুষ কিন্তু এখন দেখছি একেবারেই তরুণ একজন মানুষ। এটা সত্যিই আমাকে ভাবিত করে আর একটা কথা এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়-অনেক নামী কিংবা বড় বড় লেখক-সাহিত্যিক আছেন যারা নিজেদের একেকজন সেক্যুলার বা সবকিছুর ঊর্ব্ধের উদার মানুষ ভেবে থাকে। অথচ ঐ মানুষদের কেউ কেউ দেখেছি আমার নাম শুনলে একধরনের মনে মনে শাপ দেওয়ার মতো করে আওড়ান। তারা বলেই ফেলেন এমন আবার মানুষের নাম হয় নাকি। তাইলে কি বুঝলেন…তারাও নিয়মভাঙার অন্তরালে নিয়মকে মেনে নিয়েই একটা সিস্টেমের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আর বড় বড় কথা এক ধরনের ভকিচকি ছাড়া আর কিছুই না। এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এবয়সে- ঝুঁলি এখনো সঞ্চয় করছি যৎসামান্য এই লেখক জীবনে।

 

বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।

সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার মতামত যদি বলতে বলেন তাহলে বলতে পারি ভালো। যদি বলেন কেনো ভালো তা হলে বলতে হয়-বর্তমানের তরুণেরা অনেক অনেক ভালো কাজ করছে এবং তাদের চিন্তা চেতনা দ্বারা অন্যকে প্রভাবিত করতেও সক্ষম হচ্ছেন। তবে কিছু যে আমাদের হৃদয়ে হতাশার জায়গা তৈরি করছে না বা ফাঁক-ফোঁকড় তৈরি হচ্ছে না তা কিন্তু মোটেও না। আমরা রাতারাতি লেখক, কবি-সাহিত্যিক হওয়ার প্রবণতা থেকে অনেক অনেক বই প্রকাশ করছি আর মিডিয়ার গুলে গুণান্বিত হয়ে লেখক কিংবা কবি বনে যাচ্ছি। তবে লেখক কিংবা কবি-সাহিত্যিক হওয়া কি এতই সহজ ব্যাপার? কোনো কিছু সৃষ্টি করতে হলে সেই সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হয় আমরা অনেকেই এখন মিডিয়াগুলোকে হাতের মুঠোয় পেয়ে বইয়ের সঙ্গ ত্যাগ করছি এবং নিজেকে শূন্যের পণ্ডিত হিসেবে চিহিৃত করছি। তবে যে সৃজনশীল কাজ করছে কিংবা ভবিষ্যতে করবে সে- খুঁজে দেখুন ঠিকই তার জায়গা করে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে। তাই বলতে চাই সৃজনশীল লেখালেখি নিয়ে হতাশ কিংবা চিন্তাগ্নিত হওয়ার কোনো কারণ নাই। আর ভবিষ্যতে যা হবে তা ভালোই হবে। কেনো না হতাশা মানুষকে গ্রাস করে-স্বপ্ন মানুষকে অনেক দূরের পথে হাঁটতে সাহায্য করে।

 

লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?

স্বপ্ন ছাড়া কোনো মানুষই বাঁচতে পারে না। আর আমিও মানুষ যেহেতু আমারও একান্ত কিছু স্বপ্ন মনের খোড়লে উঁকিঝুকি মারে প্রতিনিয়ত। আমার একান্ত কিছু কাজ করার ইচ্ছে আছে। কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবার গল্প এবং উপন্যাস নিয়ে কাজ করব। এমন পরিকল্পনা আছে। আর এগুলো সময়ই নির্ধারণ করবে কখন কি করতে হবে কিংবা কি করব। লেখালেখি তো আমার রক্তে মিশে আছে। একথাটা কেনো বলছি অনেকবার লেখালেখি ছেড়ে দিতে চেয়েছি তবুও ছেড়ে দিতে পারিনি। যেহেতু ছাড়তে পারিনি আর বোধ হয় ছাড়তেও পারব না। তাই নিজের কাজগুলো আপন মনে করে যেতে চাই।

 


[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : boideshnews@gmail.com ]

Facebook Comments Box

কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না

Design & Development by: TeamWork BD