চাণক্য বাড়ৈ-এর মাতাল পদাবলি
প্রতীক্ষা
কেউ ছিল না আমার পাশে,
যখন আমি বাঁচব বলে একটুখানি ভালোবাসা ধার চেয়েছি
কেউ ছিল না, আমি তবু বোকার মতো হাত পেতেছি।
একখানি মুখ ঘুরে-ফিরে সামনে আসে
বুঝি না তো বাস্তবে না, স্বপ্নে ভাসে
তবু আমি তার আশাতে প্রহর গুণি
কখন যে তার আবেগভরা কণ্ঠ শুনি
কিন্তু আমায় কে বোঝাবে, সারাজীবন আমি কেবল ভুল করেছি
একটুখানি হাওয়াও নেই, আমি শুধু আশার নায়ে পাল তুলেছি।
সারা জীবন একলা ছিলাম একলা আছি
কে আছে আর আসবে আমার কাছাকাছি
বুকের ভেতর একটা বড় শূন্য খা-খা
যায় কি তাতে ভালোবাসার মোহর রাখা
তবু আমি ইচ্ছেডানার একটি মাছি, সাধ জেগেছে তাই উড়েছি
আকাশটাকে ধরতে গিয়ে প্রতিহিংসার আগুনফাঁদে ঠিক পুড়েছি।
কেউ বলেনি রাত হয়েছে ঘুমোতে যাও
কেউ বলেনি, কী খেয়েছ, আর দুটো খাও
কেউ ছিল না আমার পাশে, এখনও নেই
দুঃখগুলো বইছি আমি নিজে নিজেই
হয়তো একা কাটবে জীবন এমনি করে, রইবে না কেউ আগলে রাখার
তবু আমার ইচ্ছে করে তেমনি কারও অপেক্ষাতে লক্ষ বছর বেঁচে থাকার।
নিভৃতে
তুমি সুখে থাকো সংসারে তোমার
আমার সংসারে আমি
আমরা তো মানি সংসার মাঝে
সুখ সবচেয়ে দামি।
আমাদের প্রেম তাই বলে কি
মুছে যাবে একেবারে?
যে প্রেম এখনও হৃদয়ের মাঝে
চুপি চুপি কড়া নাড়ে!
সেই প্রেম থাক সেতুটির মতো
মাঝখানে থাক নদী
নামা যাবে তাতে খরার দুপুরে
ইচ্ছেটা জাগে যদি।
শুধু মনে রেখো এই নদীটি
শাসনে থাকবে ঠিক
না হলে দুকূল আবেগের বানে
ভাসাবে দিগ্বিদিক।
ওই কূলে তুমি ভালো থাকো সখি
এই কূলে থাকি আমি
আজও বয়ে চলা প্রেমনদীটিতে
নিভৃতে চলো নামি।
ডাকনাম
তোমারে দিয়েছি ডাকনাম
সেই নামে ডেকে ডেকে ফিরে আসলাম
যেভাবে শিশির জমে সকালের ঘাসে
আবার হারিয়ে যায় রোদ যদি হাসে
ভেবেছি তমনই কিছু মিছে অভিমান
জমেছে তোমার মনে শিশির সমান
তাই তো করিনি জোর… তাই থামলাম
ডাকনামে পিছু ডেকে ফিরে আসলাম।
অথচ পুরোনো নামে দিলে তুমি সাড়া
দূর থেকে ডাকল যেই, বলল সে ‘দাঁড়া’
অমনি দাঁড়িয়ে গেলে, তার আহ্বানে
আমাকে রক্তাক্ত করে তীব্র অপমানে
এর চেয়ে ভালো হতো ধারালো বটিতে
মনটাকে যদি তুমি কেটে রেখে দিতে
লাউয়ের ফালির মতো— বেশ থাকতাম
বারবার পিছুডেকে ফিরে আসলাম।
বুক বেঁধে আছি তবু, হাতে নিয়ে ফুল
হয়তো বা একদিন ভাঙবে সে ভুল
আবার আসবে তুমি হৃদয়ের তীরে
যেভাবে সন্ধ্যার পাখি ফিরে আসে নীড়ে
আবার ডাকবে তুমি ভুলে যাওয়া নামে
পাঠাবে হাজার কথা পুরোনো সে খামে
সেই সুদিনের আশায় বসে থাকলাম
ডাকনামে পিছু ডেকে ফিরে আসলাম।
ইচ্ছে
কতদিন ‘তুই’ বলি না তোকে
কতদিন হয় না কথা আর
কত দিন-রাত কাটে না শোকে
তোকে দেখার সাধ জাগে বারবার।
কালো সেই কোঁকড়ানো তোর চুল
আজও কি কপোল বেয়ে নামে
আমি কি ছুঁয়ে দেখার ভুল
করব না এ হৃদয়-কাঁপা দামে?
নাকি তুই মরীচিকার মতো
আমাকে কেবল দিবি ফাঁকি
কত মাস-বছর হলো গত
আমি তবু আশায় বসে থাকি।
কবে যে আবার হবে দেখা
চোখে তোর চুম্বন দেব মেখে
তোকে যদি পাই না সেদিন একা
দেব দেখিস কলঙ্ক দাগ এঁকে।
কতদিন ‘তুই’ বলি না তোকে
কতদিন হয় না কথা আর
কত দিন-রাত কাটে না শোকে
তোকে দেখার সাধ জাগে বারবার।
ভুল
এই নদী ছিল চেনা
ছিল খুনসুঁটি, ছিল কত অধিকার
আজকে সে নদী
চির অচেনা, আজকে সে যেন কার!
যখনই ইচ্ছে
দিয়েছি সাঁতার অতলে দিয়েছি ডুব
প্রতিবাদ কোনো
করেনি কখনো, সে তো ছিল নিশ্চুপ।
ভাসিয়েছি কত
পাল তুলে দিয়ে, প্রেমের নৌকাখান
পেয়েছি তো সাড়া
জানিয়েছি যত হৃদয়ের আহ্বান।
আজ যেন সব
মিছে কলরব, আজ যেন সব স্মৃতি
ঢেউয়ে ঢেউয়ে তার
ভাঙনের সুর, এটাই নদীর রীতি!
ফুরিয়েছে দিন
সব অধিকার, নেই সেই আশ্রয়
আজ বুঝে গেছি
সবই ছিল ভুল, ও নদী আমার নয়।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD