আমার অপরাধসমগ্র
আইনের চোখে সবাই সমান না হলেও
করোনা’র চোখে কিন্তু সবাই সমান।
করোনা ধনী-গরীব দেখে না
করোনা হিন্দু-মুসলিম চেনে না
করোনা জাতপাত মানে না
করোনা এমপি-মন্ত্রী গোনে না!
করোনা তাই অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী ভাইরাস।
এর থেকে তুমিও নিরাপদে নেই; নেই আমিও
যে কোনো সময় আমরা আক্রান্ত হতে পারি
পতিত হতে পারি মৃত্যুর মুখে।
এখনও কী তুমি অভিমানে রাগ করে বসে থাকবে?
হাজার বছর আগের পুরনো কথা মনে রেখে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে?
‘মরে যাব তবু ওর সাথে আর কথা নয়’ -এইসব দেমাগী কথাবার্তা এখনও কী বহাল রাখবে?
যদি মরে যাই কিংবা এই যাত্রায় বেঁচে ফিরি
তবে কী লাভ এই আত্মঅহংকারে?
কী লাভ হিংসা আর ক্রোধের দাবানল বুকে রেখে?
তুমি কী প্রতিনিয়ত লালন করে যাবে না অশান্তির অনল?
হে আমার প্রতিবেশী, ভাইবোন, বন্ধু ও স্বজন
আমার অপরাধের খতিয়ানের লিস্টি দেখাও দেখি…
আহা; বেশ লম্বা লিস্টি দেখছি…!
তবু আজ কোনো তর্ক নয়
নয় সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের ক্ষণ
আসুন এক এক করে সব ভুলে যাই
নিঃশর্ত ভুলে যাই পুরনো সব বেদনার ক্ষত।
ভুলে যাওয়া কঠিন কিছু নয়-
শুধু মন থেকে একবার সরি বলতে হয়
অনুতপ্ত হৃদয়ে শুধু একবার ক্ষমা চাইতে হয়।
আর যদি এ যাত্রায় বেঁচে যাই তবে আসছে বইমেলায়
তোমাদের লিস্টি নিয়ে বের হতে পারে ‘আমার অপরাধ সমগ্র।’
মানুষ বড় স্বার্থপর
এক একটি দুর্যোগ আসে আর তা যেন স্মরণ করিয়ে দেয়
ওহে মানুষ; তোমরা কত অসহায়!
অথচ আমরা নিজেরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীবের তকমা লাগিয়ে-
উপেক্ষা করছি পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীকূলকে।
আমাদের চাহিদা আর স্বার্থের কাছে
জিম্মি হয়ে গেছে অন্য সকলে।
আমরা ভুলে গেছি পৃথিবীটা শুধু আমাদের নয়…
এর অংশীদার ঘাসফড়িং, পিপড়া, পশু পাখি, সবুজ ঘাস, গাছপালা এমনকি অ্যামিবাও।
জলজ প্রাণীদের অধিকারের কথা তোয়াক্কা না করে
আমরা নদীগুলোকে হত্যা করেছি পরিকল্পিতভাবে
খাল বিলের অস্তিত্ব বিলীন করে পুকুরকে পরিণত করেছি এক একটি ভাগাড়ে।
আমাদের লোভের কারণে উজাড় হয়েছে বনভূমি
কেড়ে নিয়েছি বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রম।
আর কত প্রাণীকে যে করেছি বিলুপ্ত তার তো ইয়ত্তা নাই!
আবার শিল্পকারখানা করে প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছি পরিবেশের তাপমাত্রা।
টাকা টাকা করে আমরা ভেঙে ফেলছি প্রাকৃতিক সব ভারসাম্য
তাই ভারসাম্য রক্ষার্থে যদি করোনা’র মতো মানবপ্রাণ সংহারকারী ভাইরাস আসে
তাহলে আমি তাকে দোষ দিতে পারি না…
বোকা মানুষেরা
আমি বহু প্রাণীকে খুব কাছ থেকে দেখেছি
করেছি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ
গভীর মনোযোগে দেখেছি তাদের
দৈনন্দিন কার্যাবলী
না; তাদের কখনো কোনো প্রার্থনা করতে দেখিনি
তাদের কোনো ঈশ্বর নেই।
হয়তো মানুষের মতো তাদের নেই কুট বুদ্ধি
তাই প্রয়োজন পড়েনি কোনো কল্পিত ঈশ্বরের ।
তবে তাদের আছে একতার শক্তি
যা ওই কথিত ঈশ্বর অপেক্ষা ঢের শক্তিশালী
জগতের সকল প্রাণী তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন
তারাও দল বেঁধে চলে
দুর্যোগ ও বিপদে তারা সদা পাশে থাকে
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়
মানুষও একসময় দলবেঁধে চলত
তারপর যখন আমদানি হলো ঈশ্বরের, আমদানি হলো হাজার দেবদেবীর
তারপর তারা দল, উপদল, জাতি, ধর্মে, বর্ণ, গোত্রে, বংশে বিভক্ত হয়ে পড়ল
তখন তাদের প্রথম পরিচয় আর মানুষ থাকলো না
তার আগে চলে এলো এইসব গোত্র পরিচয়।
আর মানুষ মর্যাদার দিক দিয়ে ভাগ হয়ে গেল প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ… স্তরের কাতারে
এভাবে তাদের শক্তি গেল কমে।
এখন মানুষকে হত্যা করতে তাই কোনো এলিয়েনের দরকার পড়ে না
এইসব দল-উপদলের মধ্যে সংঘর্ষ করে নিজেরাই মরে।
হায়; অন্য প্রাণী অপেক্ষা মানুষ কত বোকা!
নতুন সকালের প্রত্যাশায়
‘গলিত স্থবির ব্যাঙ আরও দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে’
… জীবনানন্দ দাশ
আমরা কেউ মরতে চাই না। খুব করে চাই বেঁচে থাকতে। আর কিছু নয় শুধুই বেঁচে থাকা। জীবনের অন্তিম লগ্নেও চাই আরও কিছু মুহূর্ত, আরেকটি নতুন সকাল। অর্থ, সম্পদ, যশ, মান সব কিছুর বিনিময়ে হলেও চাই বেঁচে থাকতে। সারাদিন যিনি চিন্তা করেন পরকাল নিয়ে,
তুলসির মালা জপেন, নিত্য পূজা আর্চা দেন, ধর্মকর্ম করেন বেশ সাড়ম্বরে। স্বর্গের সুমিষ্ট ফল, বাগান, জল, আহারের কথা ভাবেন সতত।
আর অন্যদেরকে বলেন, ইহকাল কিছু না; পরকালের জীবনডাই আসল।
কিন্তু সেই আশি বছরের অতশীপর বৃদ্ধও চান না মরে যেতে। অসুখ হলেই বলেন তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাক খোকা!
একমাত্র মৃত্যুই তো ত্বরান্বিত করতে পারে স্বর্গের টিকিট
অথচ সে পথে পা বাড়ায় না পরকাল প্রিয় একজনও!
সামান্য দাবি
রাষ্ট্র তুমি শোষিতরে কথা কইতে দাও
রাষ্ট্র তুমি জুলুমকারীর প্রতি কঠোর হও।
রাষ্ট্র তুমি নির্যাতিতের কথা শুনে যাও
রাষ্ট্র তুমি দরদি হয়ে পাশে দাঁড়াও।
রাষ্ট্র তুমি কবিকে কথা বলতে দাও
রাষ্ট্র তুমি কট্টরপন্থীর বিরুদ্ধে খাঁড়াও।
রাষ্ট্র তুমি লেখককে কথা বলতে দাও
রাষ্ট্র তুমি হাত থেকে খড়গটি নামাও।
রাষ্ট্র তুমি সমকামীর অধিকারটা বোঝো
রাষ্ট্র তুমি বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থেকো।
রাষ্ট্র তুমি হিজরাদের কল্যাণে কাজ করো
রাষ্ট্র তুমি তাদেরকে দক্ষ করে গড়ো।
রাষ্ট্র তুমি মানুষকে কথা বলতে দাও
রাষ্ট্র তুমি সবার কথা একবার শুনে যাও।
রাষ্ট্র তুমি মানুষের মুখে লাগাম দিলে
রাষ্ট্র তোমার জনগণ বোবা হয়ে যাবে।
রাষ্ট্র তুমি বাউলকে গান গাইতে দাও
রাষ্ট্র তুমি বয়াতিকে মুক্তি দিয়ে দাও।
রাষ্ট্র তুমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঠিক রাখো
রাষ্ট্র তুমি শেখ মুজিবের আদর্শকে মানো।
রাষ্ট্র তুমি ত্রিশ লক্ষ শহিদকে ভুলো না
রাষ্ট্র তুমি প্রতিক্রিয়াশীলদের মাথায় তুলো না।
রাষ্ট্র তুমি সংস্কৃতির চর্চা করে যেও
রাষ্ট্র তুমি বাঙালিত্বের স্মারক মনে রেখো।
রাষ্ট্র তুমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিও না
রাষ্ট্র তুমি মামা-খালুর হিসাব ধরো না।
রাষ্ট্র তোমার কালো আইন খারিজ করে দিও
রাষ্ট্র তুমি মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটতে দিও।
রাষ্ট্র তুমি যুক্তিবাদকে লালন করে যেও
রাষ্ট্র তুমি বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্বরোপ করো।
রাষ্ট্র তুমি সবার প্রতি সমান সদয় থেকো
রাষ্ট্র তুমি সাম্যবাদের গানটি গেয়ে যেও।
রাষ্ট্র তুমি উদারতার কথা বলে যেও
রাষ্ট্র তুমি ন্যায়বিচারের পাল্লাটা ঠিক রেখো।
রাষ্ট্র তুমি মানবিকতার স্থান দিও আগে
রাষ্ট্র তুমি বৈষম্যকে পাঠাও নির্বাসনে।
রাষ্ট্র তোমার কাছে আমার এই সামান্য দাবি
রাষ্ট্র তোমার কাছে রইলো ইতিহাসের চাবি।
কপিরাইট © ২০১৭ - ২০২০ ।। বইদেশ-এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design & Development by: TeamWork BD